প্রায় তিন সপ্তাহ আগে মহাকাশে গিয়েছিলেন দুজন নভোচারী। কিন্তু এখন তারা সেখানে আটকে আছেন। কীভাবে ফিরবেন, কবে ফিরবেন? তা কারও জানা নেই।
বোয়িংয়ের স্টারলাইনার নভোযানে করে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন এই দুই নভোচারী। নভোচারীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো মহাকাশে অভিযানে গিয়েছিল স্টারলাইনার। কিন্তু প্রথম দফাতেই মহাকাশ অভিযানে বড় ধাক্কা খেল বোয়িং।
গত ৫ জুন মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল স্টারলাইনার। সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল দুই নভোচারী ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসকে। এই প্রথম টেস্ট পাইলট হিসেবে মহাকাশে গেলেন কোনো নারী।
দ্য গার্ডিয়ান, টাইমস অব ইন্ডিয়া, স্কাই নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভেড়ার পর নাসার ওই নভোচারীদের সেখানে আট দিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু স্পেস ক্যাপসুলে হিলিয়াম লিক, ম্যানুভারিং থ্রাস্টে সমস্যা ও প্রোপেলেন্ট ভাল্ভ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
এখন পর্যন্ত তিনবার ওই দুই নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরার সময় পরিবর্তন করেছে নাসা। কিন্তু এখন তাদের ফেরার জন্য নতুন করে আর কোনো তারিখ দিচ্ছে না মার্কিন এই মহাকাশ সংস্থাটি।
যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্টারলাইনার এই দুই নভোচারীকে আগামী ৬ জুলাই পৃথিবীর বুকে ফিরিয়ে আনতে চায়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, এক মাস মহাকাশে কাটাতে হবে দুই নভোচারীকে।
বর্তমানে স্টারলাইনারের এক্সপান্ডেবল প্রোপুলসন সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। এর সাহায্যেই ক্যাপসুলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে দূরে সরে যাবে এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে।
নাসার একজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, স্টারলাইনারের অধিকাংশ থ্রাস্টার্স উড্ডয়নের সময় অতিরিক্ত গরম হয়ে গেছে এবং হিলিয়াম লিকের মতো ঘটনা ঘটেছে। এখন স্টারলাইনারের মহাকাশযানে খুঁটিনাটি ঠিক করে সময় ব্যয় করছেন দুই নভোচারী।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্টারলাইনারকে ৪৫ দিন পর্যন্ত ভিড়িয়ে রাখা যাবে। তবে উপায়ন্তর না থাকলে বিভিন্ন ব্যাকআপের সাহায্যে ৭২ দিন পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারবে স্টারলাইনার। কিন্তু এটি যদি একান্তই নভোচারীদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার অযোগ্য হয়। তাহলে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগনের সাহায্যে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এই দুই নভোচারী। যদিও এমন কিছু না-ও ঘটতে পারে। আর এটা বোয়িংয়ের জন্য লজ্জাজনকও হবে। কিন্তু নাসার কর্মকর্তারা বলছেন, এর বিকল্প কিছু দেখছেন না তারা।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যেতে আপাতত একমাত্র ভরসা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযান। ইলন মাস্কের এই মহাকাশযানটি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান, কানাডিয়ান ও জাপানি নভোচারীদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আনা-নেওয়ার কাজ করে। ২০১৪ সালে নাসা স্পেসএক্স ও বোয়িংকে বাণিজ্যিক ক্রু ক্যাপসুল তৈরির কাজ দিয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে নভোচারীদের মহাকাশ স্টেশনে আনা-নেওয়ার কাজ করছে স্পেসএক্স। কিন্তু নানা জটিলতায় পিছিয়ে পড়ে বোয়িং।
মন্তব্য করুন