সেই ভ্লাদিমির পুতিনই শেষ পর্যন্ত ইউরোপের ত্রাতা হয়ে উঠলেন। যাকে থামাতে দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে পশ্চিমারা, তার দিকেই সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে হলো ইউরোপকে। অথচ নিষেধাজ্ঞা, সামরিক হামলার হুমকি, এমনকি রাশিয়াকে একঘরে করে রাখার মতো সব ধরনের প্রচেষ্টাই চালিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা। কিন্তু কোনো কিছুই পুতিনকে টলাতে পারেনি।
রাশিয়াকে ঠেকাতে কোনো কৌশলই বাদ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। তাদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে বিজয়ের হাসি হেসেছেন পুতিন। ফিনান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় যে সংকটে পড়ে, তাহলে হচ্ছে গ্যাসের সরবরাহ। কেননা, ইউরোপের দেশগুলো গ্যাসের জন্য ‘পুরোপুরি’ রাশিয়া নির্ভর ছিল।
যুদ্ধ শুরুর পর সাময়িক বিকল্প খুঁজে নেয় ইউরোপ। কিন্তু পরিস্থিতি আবার রাশিয়ার ‘অনুকূলে’ আসতে খুব বেশি দিন লাগেনি। ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, প্রায় দুই বছরের মধ্যে গেল মে মাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছে রাশিয়া। যদিও রাশিয়ার ফসিল ফুয়েল রপ্তানি বন্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল পশ্চিমারা, কিন্তু তা কোনো কাজেই লাগেনি।
ইউক্রেনে ২০২২ সালে হামলার পর রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন কেটে দেয়। আর ইউরোপীয়রাও রাশিয়ার কাছ থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয়। এরপরই কপাল খুলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সরবরাহকারীর। একই বছরের সেপ্টেম্বরে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে রাশিয়াকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সাল নাগাদ ইউরোপের মোট গ্যাস সরবরাহে এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করতে শুরু করে দেশটি।
কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমোডিটি ইন্টিলেজেন্স সার্ভিসেস- ICIS এর ডাটা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। তারা বলছে, গেল মাসে ইউরোপে পাইপলাইন ও এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহ করা গ্যাসের প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল রাশিয়ান। এ সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং উত্তর মেসিডোনিয়া রাশিয়ার গ্যাস কিনেছে। একই সময় ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ।
ইউরোপেরই কয়েক দেশ রাশিয়ার এলএনজি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চাইছে। কিন্তু তার মধ্যেই এমন উল্টো চিত্রের দেখা মিলল। ২০২২ সালের মাঝামাঝি পাইপলাইনের মাধ্যমে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। যদিও পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউক্রেন ও তুরস্কে ঠিকই গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখে মস্কো। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র্রের একটি বড় এলএনজি রপ্তানি ফ্যাসিলিটিতে সমস্যার কারণে ‘গিয়ার’ পেয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আজারবাইজানের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্যাস করিডোরে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে পাইপলাইনের সক্ষমতা বাড়ানো তারই অংশ। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এও বলেছেন, আপাতত তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেনি এই রুট।
মন্তব্য করুন