লেজারের মতো দেখতে একটি রশ্মি গাজায় আঘাত হানছে, এমন একটি ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানের দাবি, এটা আসলে লেজার মিসাইল।
ওই ছবিতে যে রশ্মি দেখা গেছে, সেটা কীসের তার সত্যতা নিশ্চিত করা না গেলেও লেজার দিয়ে হামলার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে বিশ্বে যে কয়েকটি দেশের হাতে লেজার অস্ত্র রয়েছে, ইসরায়েল তাদের একটি।
লেজার প্রযুক্তির তৈরি অস্ত্র, এখনো খুব একটা বিকাশ লাভ করেনি। তবে এই অস্ত্র দিয়ে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে খরচ হয় খুবই কম।
আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেই চালানো যায় হামলা। তাই সামরিক শক্তিতে বলীয়ান দেশগুলো ঝুঁকছে লেজার অস্ত্রের দিকে। এরই ধারাবাহিকতা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার অস্ত্র বানাতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ জন্য গেল বছর অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে ৫০০ কিলোওয়াটের লেজার অস্ত্র সরবরাহ করবে।
একবার এমন অস্ত্র তৈরি হয়ে গেলে ওই লেজার বিম দিয়ে ক্রুজ মিসাইলও ধ্বংস করা যাবে। বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাতে যে লেজার অস্ত্র রয়েছে, তার ক্ষমতা ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সময়েই দেশটির সেনাবাহিনী রাসায়নিক লেজারের পরীক্ষা শুরু করে। আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীর।
তবে সেই আশায় গুড়ে বালি। খুব দ্রুতই মার্কিন সেনাবাহিনী উপলব্ধি করে, এই প্রযুক্তি এখনো প্রস্তুত হয়ে ওঠেনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে লেজার অস্ত্র প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে।
বর্তমানে ইসরায়েলের হাতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার অস্ত্র। এই অস্ত্রকে আয়রন বিম নামে দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত এসব লেজার অস্ত্র দিয়ে আকাশপথে আসা অধিকাংশ হামলা ঠেকানো সম্ভব না। এখন পর্যন্ত ড্রোন এবং মর্টারের ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পেরেছে লেজার অস্ত্র। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে অ্যান্টি-মিসাইলের সাহায্য নিতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিরেক্ট ফায়ার প্রোটেকশন ক্যাপাবিলিটি-হাই এনার্জি লেজার (আইএফপিসি-এইচইএল) প্রোটোটাইপ কর্মসূচির আওতায় তৈরি করা অস্ত্রের সক্ষমতা ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত। কয়েক বছর আগে লকহিডের ৩০০ কিলোওয়াটের লেজার রশ্মি একটি সিমুলেটেড ক্রুজ মিসাইল ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়। তবে ২০২৫ সালে লকহিড ৫০০ কিলোওয়াটের লেজার অস্ত্র সরবরাহ করলে দৃশ্যপট আরও ভিন্ন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আকাশপথ থেকে আসা যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতোই লেজার ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ছেড়ে লেজার অস্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই প্রযুক্তির খরচ খুবই কম। একটি মিসাইল লঞ্চ করতে যেখানে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ হয়, সেখানে লেজার ব্যবস্থায় তা মাত্র কয়েক ডলার।
লেজার ব্যবস্থার আরও একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে কখনো অ্যামিউনিশন শেষ হবে না। এই অস্ত্র ব্যবহারে একমাত্র খরচ হচ্ছে বিদ্যুৎ। কিন্তু এত কিছুর পরও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো শক্তিশালী লেজার বানানো অনেক দূরের বিষয়। বর্তমানে প্রচলিত প্রযুক্তির সাহায্যে সর্বোচ্চ কোনো একটি টার্গেট ছিদ্র করতে সক্ষম লেজার রশ্মি। তবে জ্বালানি বা ওয়ারহেডে রশ্মি আঘাত করলে ভিন্ন কথা।
মন্তব্য করুন