গাজা যুদ্ধ নিয়ে অনেকেটা মুখোমুখি অবস্থানে বাইডেন-নেতানিয়াহু। যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করলেও থোরাই কেয়ার করছেন তিনি। কারও কোনো কথাই কানে তুলছেন না নেতানিয়াহু। এতে প্রশ্ন উঠেছে আসলেই কী পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ফাটল ধরেছে ইসরায়েলের?
বলা হচ্ছে, কুখ্যাত নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। সম্প্রতি এই ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহু প্রশাসনের চাপাচাপিতে নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে ওয়াশিংটন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে নির্দয় ইউনিটের নাম হচ্ছে নেতজাহ ইয়েহুদা। ইহুদিদের সমন্বয়ে গঠিত এই ব্যাটালিয়নে কোনো নারী সদস্য নেই। এই ইউনিটের বিরুদ্ধে প্রায়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে গেল বছর এক ফিলিস্তিনি-আমেরিকানকে হত্যার ঘটনায় নেতজাহ ইয়েহুদা নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেলআবিবের টানাপড়েন চলছে।
পদাতিক বাহিনীর ৯৭তম নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে নাহাল হারেদি নামে পরিচিত। এই ব্যাটালিয়ন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কেফির ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত। হারেদি ইহুদি পুরুষদের সমন্বয়ে গঠিত ইউনিটের সদস্যরা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস বজায় রেখে এই ব্যাটালিয়নে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সাধারণত পশ্চিম তীরে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন।
নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের মোটো হচ্ছে, সামরিক ক্যাম্প পরিচ্ছন্ন রাখা। অর্থাৎ তাওরাত অনুযায়ী, ইহুদিদের সামরিক ক্যাম্প পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর জোর দেওয়া। তাদের বিশ্বাস, এমনটা করলে যুদ্ধের সময় ঐশ্বরিক সাহায্য পাবেন নেতজাহ ইয়েহুদার সদস্যরা। বিশেষ এই ইউনিটের ক্যাম্পে কোনো নারী প্রবেশের অনুমতি নেই। কেবলমাত্র সৈন্য এবং কর্মকর্তাদের স্ত্রীরাই ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পে যেতে পারে।
ইসরায়েলি ওয়াগনার গ্রুপ খ্যাত এই ব্যাটালিয়ন ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়। শুরুতে মাত্র ৩০ জন সৈন্য ছিল এই ব্যাটালিয়নে। নেতজাহ ইয়েহুদা একমাত্র ইউনিট যেটি বারবার পশ্চিম তীরে মোতায়েন করা হয়েছে। পরে অবশ্য জর্ডান ভ্যালি, জেনিন, তুলকারম এবং রামাল্লায় তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তার করা হয়। বর্তমানে এই ব্যাটালিয়নের ১ হাজারের বেশি সৈন্য রয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অন্য যে কোনো ইউনিটের চেয়ে ভিন্ন এই নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন। এই ইউনিটের জন্য স্বেচ্ছায় নিয়োগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নে আল্ট্রা-অর্থডক্স, ধর্মীয় জায়নবাদী, হারেদি ইহুদি ও বিদেশি স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ইহুদি আইন অনুযায়ী সৈন্যদের জন্য খাদ্য তালিকাও এই ইউনিটের জন্য তৈরি করা হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনে সিদ্ধহস্ত নেতজাহ ইয়েহুদা ২০২২ সালে গ্রেপ্তারের সময় ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওমর আসাদকে হত্যা করে। পরে মার্কিন চাপে, ওমরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় তেলআবিব। যদিও শেষপর্যন্ত নেতজাহ ইয়েহুদার সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করা থেকেই বিরত থাকে ইসরায়েলি সরকার।
মন্তব্য করুন