শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১২ পিএম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশন শেষ হচ্ছে কাল

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। পুরোনো ছবি
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। পুরোনো ছবি

দশ দিনব্যাপী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শেষ হচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ অধিবেশন শুরু হলেও মূল অধিবেশন শুরু হয় ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে। যদিও এই সম্মেলনে জাতিসংঘের ৫টি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মধ্যে ৩টি দেশই অনুপস্থিত ছিল। মহামারি করোনার পর এবারের অধিবেশন সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় সাধারণ অধিবেশনটি বেশ জনাকীর্ণ ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তর প্রাঙ্গণ।

অবশ্য কোভিড-পরবর্তী এই অধিবেশনের সবার দৃষ্টি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে কী আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরাশক্তি রাশিয়া ও চীন সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকায় সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তো দূরে থাক আলোচনাই হয়নি। তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী জেলেনস্কির বক্তব্যকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে বলা হয় বিশ্বের আইন পরিষদ। বিশ্বের সব দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এখানে প্রায় সব বৈশ্বিক প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। এবার জাতিসংঘের ৭৮তম বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।

প্রথম সাত দিন হয়েছে উচ্চপর্যায়ের বক্তৃতা, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের নেতারা এতে অংশগ্রহণ করেন। বিদেশি নেতাদের কালো গাড়ির ভিড়ে ম্যানহাটনে রাস্তা পার হওয়াই যেন কঠিন হয়ে পড়ে। মূল অধিবেশনে ভাষণের বাইরে আরও হাজারটা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বাস্তবতা হলো- সপ্তাহ ধরে যে সাধারণ বিতর্ক হলো, তাতে নেতারা যে যার মতো ভাষণ দিয়ে ঘরে ফিরবেন। কথা বলা শেষ হতে না হতেই কী বলা হলো সবাই তা ভুলে যাবেন।

এবারের ৭৮তম সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ভাষণ দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সপ্তদশ বারের মতো ইউএনজিএ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয় তুলে ধরেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সাইড ইভেন্টে অংশ নেন। সেখানে মিয়ানমান থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাশনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন।

২১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গার বিশাল এ জনগোষ্ঠী থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি যেন ফিরে না যায় সেই আহ্বান জানান। রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা কমা, প্রত্যাবাসনে ধীরগতিতে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানায়। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি। একই দিনে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেন।

এ ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে নানা অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। উচ্চ পর্যায়ের একটি অধিবেশনে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি থেকে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়’।

কোভিড অতিমারি প্রমাণ করেছে যে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যে কোনো সংকট থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বসূচকে পঞ্চম স্থান লাভ করেছি।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব করেন তিনি। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সেইসঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধি ডাইনিং রুমে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তিনি জাতিসংঘে নারী মহাসচিব নিয়োগের মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে। আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব।

১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সময় আশা করা হয়েছিল এই বিশ্ব সংস্থাটি পৃথিবী থেকে যুদ্ধ, অনুন্নয়ন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঠেকাবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যে দেশগুলো জার্মানি ও তার মিত্রদের পরাস্ত করে তারাই এই সংস্থা গঠনের আসল চালিকা শক্তি। জাতিসংঘকে নিয়ে আশা ও উৎসাহের সেটাই আসল কারণ। কিন্তু খুব বেশি দিন লাগল না দেশগুলোর বন্ধুত্বে চিড় ধরতে। শুরু হয়ে গেল পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই। যারা যুদ্ধ ঠেকাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দেখা গেল তারাই যুদ্ধ বাধাতে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। পৃথিবীকে এক করার বদলে তাকে বিভক্ত করে যার যার প্রভাব বলয়ে আনাই তাদের আসল লক্ষ্য।

এরপর ৭৭টি বছর কেটে গেলেও অবস্থা বদলায়নি, বরং বহুগুণে অবনতি ঘটেছে। পাঁচটি দেশকে তাদের সার্বিক গুরুত্বের কারণে এই সংস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ‘ভেটো’ প্রদানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ বছর সেই ৫ দেশের ৩ নেতাই অনুপস্থিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘বাংলাদেশের সব জায়গায় নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করেছে’

শিরোপা দিয়ে কিংসের মৌসুম শুরু

নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবে ইতালি

জামায়াত রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে নেয় না : সেলিম উদ্দিন

২৩ রানের জন্য ফেরারি মিস আর্যবীরের

বড় যুদ্ধ বাধলে যেসব দেশকে পাশে পাবে রাশিয়া

মেসির কণ্ঠে বার্সেলোনার প্রশংসা

‘জনগণের বিরুদ্ধে গেলে সরকারকে এক সেকেন্ডও দেওয়া হবে না’

আইসিসির চুক্তিতে সই করা ১২৪ দেশে গেলেই গ্রেপ্তার হবেন নেতানিয়াহু

বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে জনগণ উদগ্রীব : আমান

১০

নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যাব : ধর্ম উপদেষ্টা

১১

নির্বাচনী সংস্কার সবার আগে দরকার : এ্যানি 

১২

গুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না : প্রেস সচিব

১৩

এক ইলিশের দাম ৬ হাজার টাকা

১৪

ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট সামিট ২০২৪ লরিয়েট সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশি তরুণ

১৫

ছায়ানটের লোকসংগীত আসরে দেশসেরা ৫ গীতিকবির গান

১৬

চাঁদাবাজদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পুলিশে দিন : হাসনাত আবদুল্লাহ

১৭

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী : রিজভী 

১৮

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বোলিংয়ে টাইগাররা

১৯

নাটোরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

২০
X