ইলন মাস্ক শুধু প্রযুক্তির অগ্রদূত নন, ব্যক্তিজীবনেও এক বিস্ময়কর চরিত্র। টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিংক, এক্সের মতো কোম্পানি হাতে রেখে তিনি এখন নজর দিয়েছেন এক ভিন্ন ‘প্রকল্পে’।
সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন ইঙ্গিত দিচ্ছে- মাস্ক যেন ২১ শতকের ‘চেঙ্গিস খান’ হয়ে উঠতে চাইছেন। তার লক্ষ্য : বিশ্বজুড়ে নিজের বংশ বিস্তার।
প্রসঙ্গত, চেঙ্গিস খান একসময় যুদ্ধ করে তৈরি করেছিলেন বিশাল সাম্রাজ্য, আর তার উত্তরসূরি ছড়িয়ে পড়েছিল দুনিয়ার নানা প্রান্তে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, আজকের দিনে পৃথিবীর প্রায় ১ কোটির বেশি পুরুষ বহন করছেন চেঙ্গিস খানের জিন। ইতিহাস যেন নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে- তবে এবার তরবারির বদলে ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি, প্রভাব ও গোপন চুক্তি।
বর্তমানে ইলন মাস্কের সন্তানের সংখ্যা ১৪। এদের মা চারজন নারী- তার প্রাক্তন স্ত্রী লেখিকা জাস্টিন উইলসন, গায়িকা গ্রিমস, নিউরালিংকের ডিরেক্টর শিভন জিলিস এবং সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলে সেন্ট ক্লেয়ার। তবে গোপন সূত্র বলছে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
মাস্কের সন্তান সংখ্যা কেবল ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, বরং এটি তার বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। তার মতে, বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাস পাওয়া মানব সভ্যতার জন্য ভয়াবহ হুমকি। মানব জাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে হলে আরও সন্তান দরকার, বিশেষ করে মেধাবী ও উদ্ভাবনী লোকদের, এমনটাই বারবার বলে আসছেন মাস্ক।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের মূল ভিত্তি ২৬ বছর বয়সী ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলে সেন্ট ক্লেয়ার, যিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্কের ১৩তম সন্তানের জন্ম দেন- নামের রোমুলাস।
অ্যাশলে জানান, মাস্ক তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজে নেন, সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাকে সন্তান নেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে তাকে সন্তানের পরিচয় গোপন রাখতে একটি গোপনীয়তা চুক্তিতে সই করতে বলেন, যার বিনিময়ে দেওয়া হতো বিপুল অর্থ।
অ্যাশলে সেই চুক্তিতে সই না করে ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন। তার বক্তব্য : আমি চাই না আমার সন্তান তার বাবার পরিচয় গোপনে জানুক। এটা তার অধিকার।
শুধু অ্যাশলে নন, মাস্ক একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন জাপানি ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সার টিফানি ফং-কেও। ফং অবশ্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি একটি স্বাভাবিক পরিবারে সন্তান জন্ম দিতে চান, গোপন ‘প্রজেক্টে’ নয়।
মাস্ক এসব অভিযোগকে ‘খারাপ মানের গসিপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমি আগেও বলেছি, জন্মহার কমে যাওয়াটা মানব সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমরা যদি পর্যাপ্ত সন্তান না নেই, তাহলে সমাজ বিলুপ্ত হবে।
তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি সন্তান জন্মকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখেন না; এটি তার মতে একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব। তাই ‘উন্নত জিন’ আছে এমন মানুষদের আরও বেশি সন্তান নেওয়া উচিত- এমনটি তিনি বিশ্বাস করেন।
ইতিহাসের পাতায় চেঙ্গিস খান যেমন একসময় রাজ্য জয়ের পাশাপাশি শত শত সন্তান রেখে গিয়েছিলেন, মাস্কের এই কর্মযজ্ঞ অনেকের কাছেই সেই দিকেই ইঙ্গিত করে। পার্থক্য শুধু, একসময় তলোয়ার ছিল মাধ্যম, এখন মাধ্যম হয়েছে প্রযুক্তি, প্রভাব এবং এক্স প্ল্যাটফর্ম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক শুধু ব্যবসা বা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেই নয়, জেনেটিক উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও ইতিহাস গড়তে চান। এ যেন আধুনিক যুগের নতুন ধাঁচের সাম্রাজ্য বিস্তার।
মন্তব্য করুন