পরমাণু ইস্যুতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম দফায় ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) ওমানের মধ্যস্থতায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ এ বৈঠক হয়। উভয়পক্ষ আগামী সপ্তাহে আরেকটি বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি ইরানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আলোচনা ব্যর্থ হলেও হামলা করে বসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
মনে করা হচ্ছে, ইরান তার আগের কট্টরপন্থি অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কারণ, এর আগে পারমাণবিক মধ্যস্থতা নিয়ে ইরানের নেতারা হম্বিতম্বি করে আসছিলেন। তারা কিছুতেই মার্কিনিদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ নীতির ঘোষণা দেন। বলেন, কোনো চুক্তি না হলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্পের যুদ্ধের হুমকির পর নমনীয় হতে থাকে ইরান। তবে সরাসরি আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দেশ। এর বদলে ওমানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ বৈঠকে মিলিত হয় উভয়পক্ষ।
তেহরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মসূচি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র উঠেপড়ে লেগেছে। ট্রাম্প কিছুতেই ইরানের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। অপরদিকে ইরানকে দমাতে মার্কিন মদদে সামরিক পদক্ষেপের সুযোগ খুঁজছে ইসরায়েল।
বৈঠক শেষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, আমি মনে করি আমরা আলোচনার জন্য একটি ভিত্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি এবং যদি আমরা আগামী সপ্তাহে এই ভিত্তিটি শেষ করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব। এর উপর ভিত্তি করে প্রকৃত আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হব।
আরাঘচি বলেন, ইরান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে প্রথম আলোচনা শান্ত ও ইতিবাচক পরিবেশ হয়েছে। বৈঠক ছিল প্রোডাকটিভ। এ সময় ২০১৭-২০২১ সালে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার প্রসঙ্গও উঠে আসে। উভয় পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে, সম্ভবত আগামী শনিবার আমরা আবার বসব।
তিনি আরও বলেন, ইরান এবং মার্কিন পক্ষ স্বল্পমেয়াদে একটি চুক্তি চায়। আমরা শুধু আলোচনার জন্য আলোচনা চাই না।
অপরদিকে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভেন উইটকফ ও ওমানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আনা এসক্রোগিমা আলোচনায় মার্কিন পক্ষ ছিলেন। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস এটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক এবং গঠনমূলক বলে অভিহিত করেছে। বলেছে, এই বিষয়গুলো খুবই জটিল। আজ (শনিবার) বিশেষ দূত উইটকফের সরাসরি যোগাযোগ পারস্পরিক উপকারী ফলাফল অর্জনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নেবে। পক্ষগুলো আগামী শনিবার আবার দেখা করতে সম্মত হয়েছে।
শনিবার রাতে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি তারা ঠিকঠাক চলছে। এটি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত আপনি কিছুই গুরুত্বপূর্ণ বলতে পারবেন না। তাই আমি এটি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করছি না। তবে এটি ঠিকঠাক চলছে। আমার মনে হয়, ইরানের পরিস্থিতি বেশ ভালোই চলছে।
তবে আলোচনা শেষমেশ ফলপ্রসূ হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু ইস্যুতে ইরানকে ছাড় দিতে নারাজ। অপরদিকে ইরান তার অগ্রগতি ও দেশীয় স্বার্থ বিসর্জন দেবে না বলে অঙ্গীকার করে আসছে।
আলোচনায় বসার আগেই ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। ইরান জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ চায় না এবং পারমাণবিক অস্ত্রও তৈরি করতে চায় না। তবে তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন।ট্রাম্পের হুমকির পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের সঙ্গে সৎ মনোভাব নিয়ে আলোচনা করতে চায়, তবে আমরা সেই পথে যাব। কিন্তু যদি তারা আমাদের ওপর চাপ তৈরি করতে চায়, তাহলে কোনো সমঝোতা হবে না।’
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কূটনীতি মানে আত্মসমর্পণ নয় এবং বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাপের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’ এর মানে হলো, তারা নিজ স্বার্থ রক্ষা এবং বৈশ্বিক শান্তির জন্য সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তেহরান জানিয়েছে, তারা কেবল সম্মান ও নিরাপত্তা চায়, যুদ্ধ নয়।
মন্তব্য করুন