বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পোশাকের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান। তিনি এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুল পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেন। সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেলবিজয়ী এ অর্থনীতিবীদ এমন মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে পল ক্রুগম্যান বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের উপর উচ্চ শুল্ক দেওয়ার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এটি বাণিজ্য বিঘ্নিত করে, আমেরিকান ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় এবং আমাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা রাখে না।
ক্রুগম্যান জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় উৎপাদন, ফ্রেন্ডশোরিং (বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে উৎপাদন) বা নিয়ারশোরিং (কাছাকাছি দেশে উৎপাদন) এর মাধ্যমে সরবরাহ শৃঙ্খল নিরাপদ করা যায়। কিন্তু এজন্য ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কানাডা বা মেক্সিকোর উপর শুল্ক চাপানো সমাধান নয়।
ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের পরিবর্তে শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দসই কথা লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে বব লাইটহাইজারের কথা উল্লেখ করেন। লাইটহাইজার ওয়াশিংটনে সংরক্ষণবাদী নীতির একজন প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।
ক্রুগম্যানের মতে, লাইটহাইজার একজন জ্ঞানী ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তি। কিন্তু তাকে বর্তমান প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, সম্ভবত স্বাধীন মতামত এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অন্ধ আনুগত্য না থাকায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি হয়তো বলতেন, ‘না, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ করা উচিত নয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ১০০টি নতুন আমেরিকান পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বাশির উদ্দিন গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) এর কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেই বাংলাদেশ একতরফাভাবে ১৯০টি আমেরিকান পণ্যে শুল্ক শূন্য করে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছিল। নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শুল্কমুক্ত পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৯০টিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যে শুল্ক আরোপ করে, তাদের রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে বাংলাদেশি পণ্যের উপর গড় শুল্ক পূর্বের ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম বাড়বে, যা রপ্তানি বাজারে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে কূটনৈতিক সমঝোতার পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি এবং ক্রুগম্যানের সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
মন্তব্য করুন