চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে টেসলার গাড়ি বিক্রিতে নাটকীয় পতন ঘটেছে। মূলত কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের রাজনৈতিক অবস্থান এবং পুরোনো মডেলগুলোর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণে গ্রাহকদের আগ্রহ কমছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) প্রকাশিত ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এসিইএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে টেসলার নতুন গাড়ির নিবন্ধন ৪৯ শতাংশ কমেছে। বিক্রির সংখ্যা ১৯ হাজার ৪৬টিতে নেমে এসেছে, যা প্রায় অর্ধেকের সমান হ্রাস। খবর এএফপি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বৈদ্যুতিক গাড়ির সামগ্রিক বিক্রি ২৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮৯ ইউনিটে পৌঁছেছে। এর মধ্যে টেসলার বিপরীতমুখী প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, কোম্পানিটি ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার চাপে রয়েছে। বিশেষ করে চীনা ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর নতুন মডেলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টেসলার পুরোনো মডেলগুলো পিছিয়ে পড়ছে।
টেসলার জনপ্রিয়তায় পতনের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে মাস্কের রাজনৈতিক অবস্থানকে দায়ী করা হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি জার্মানির একটি অতি-ডানপন্থি দলকে সমর্থন করেছেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এতে ইউরোপের বাজারে ব্র্যান্ডটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বৃহত্তম গাড়ির বাজার জার্মানিতে টেসলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। বছরের শুরু থেকে দেশটিতে অন্তত আটটি টেসলা গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও বেশ কয়েকটি টেসলা ডিলারশিপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা কোম্পানির প্রতি ক্রেতাদের হতাশা ও অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়।
গ্লোবাল কনসালটেন্সি রোল্যান্ড বার্জারের বিশ্লেষক ম্যাথিউ নোয়েল বলেন, অনেক মানুষ মাস্কের রাজনৈতিক মতামতের সঙ্গে একমত নন, যা টেসলার বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে নাকি অস্থায়ী, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও বিক্রিতে ধস নামার প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারেও। গত মাসে টেসলার শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি ইলন মাস্ক তার রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখেন এবং নতুন মডেল আনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেন, তবে টেসলার ব্যবসা আরও সংকটে পড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়, কোম্পানিটি এই প্রতিযোগিতা ও সমালোচনার চাপে কীভাবে টিকে থাকে।
মন্তব্য করুন