বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রথম স্ত্রী জাস্টিন উইলসনের সন্তান, ২০ বছর বয়সী ভিভিয়ান জেনা উইলসন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে টোকিওতে চলে গেছেন।
ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত ভিভিয়ান এখন জাপানে ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করছেন এবং তার লক্ষ্য একজন দক্ষ অনুবাদক হওয়া। তিনি জানিয়েছেন, তার বাবা ইলন মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন শুধুই অতীত এবং তিনি আর তার বাবার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে চান না।
সোমবার (২৪ মার্চ) রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির বিনোদনবিষয়ক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম আরটি নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে জন্ম নেওয়া ভিভিয়ান মাস্কের প্রথম স্ত্রীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে একজন। ১৬ বছর বয়সে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে মায়ের পদবি গ্রহণ করেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে ভিভিয়ান রাখেন। তখন থেকেই তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তার আর ইলন মাস্কের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
ভিভিয়ান, যিনি এখন টোকিওতে বাস করছেন, তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি গভীর সামাজিক চিন্তা রয়েছে। তিনি বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে ধনী-গরিবের বিশাল বৈষম্য দেখে আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি এমন একটি সমাজে বাস করতে চাই না, যেখানে একদিকে বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বিমান, দ্বীপ এবং অন্যান্য সম্পত্তির মালিকরা আছেন, অথচ অন্যরা রাস্তায় ঘুমাচ্ছে।
এছাড়াও, ভিভিয়ান তার বাবা সম্পর্কে বলেন, তিনি কিছুই পরোয়া করেন না। তিনি একজন নাজুক শিশুসুলভ মানুষ, তার সঙ্গে যুক্ত থাকাটাই বিরক্তিকর। ২০২০ সালের পর থেকে তিনি আর তার বাবার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি, বলেও জানান তিনি।
ভিভিয়ান অবশ্য জানিয়ে দেন, তার জাপান যাওয়ার সিদ্ধান্তে ইলন মাস্কের কোনো ভূমিকা নেই। গত সপ্তাহে, তিনি ‘টিন-ভগ’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। তার মতে, এটি ছিল তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক বৈষম্য সহ্য করা সম্ভব নয়।
একদিকে, মাস্ক নিজে তার সন্তানকে নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। ২০২১ সালে, কানাডীয় মনোবিজ্ঞানী ড. জর্ডান পিটারসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, তার সন্তান ভিভিয়ান ‘ওয়োক মাইন্ড ভাইরাসে’ আক্রান্ত। তিনি আরও দাবি করেন, তার ওপর কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে প্রতারিত হন, যা তখন তার কাছে পরিষ্কার ছিল না।
এদিকে সম্প্রতি ইলন মাস্কের মালিকানাধীন টেসলা ডিলারশিপ ও গাড়িগুলোর ওপর একাধিক হামলা হয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, এর পেছনে মাস্কের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে থাকা ভূমিকা রয়েছে।
একইসঙ্গে, ট্রাম্প প্রশাসন ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর, ইলন মাস্ক ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়ে এক্সে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ট্রান্সজেন্ডারদের সহিংস হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি। হরমোন ইনজেকশন তাদের মধ্যে চরম আবেগীয় অস্থিরতা তৈরি করে।
এভাবে, ইলন মাস্কের সন্তান ভিভিয়ান জেনা উইলসনের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার সিদ্ধান্ত, তার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবারের সম্পর্কের এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এই ঘটনাটি শুধু ইলন মাস্কের পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক বৈষম্য এবং ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যও তুলে ধরেছে।
মন্তব্য করুন