মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বর্তমানে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তার পূর্ববর্তী অভিযানে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরাধ, যেমন মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ, শিশু নির্যাতন এবং কর জালিয়াতির মতো অপরাধের পরিবর্তে অবৈধ অভিবাসী ধরার কাজে ব্যস্ত করে তুলেছে।
এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ দ্বিধাবিভক্তিকে আরও জোরালো করছে। খবর রয়টার্স।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যতদিন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তার প্রশাসন বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থাগুলোর কর্মীদের মূল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অভিবাসন নীতি কঠোরভাবে কার্যকর করতে নিয়োজিত করছে। আগের দিনগুলোতে এসব সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের সন্ত্রাসবাদ, মাদক চোরাচালান, এবং শিশু যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে মনোযোগী করেছিল, কিন্তু বর্তমানে তাদের অধিকাংশ কর্মী এখন অবৈধ অভিবাসী ধরার জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।
একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করা বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজে বের করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে, দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই এখন সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার এবং শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধের চেয়ে অবৈধ অভিবাসীদের ধরার কাজে বেশি মনোনিবেশ করছে। এই পরিবর্তন গত আড়াই দশকে একেবারেই নজিরবিহীন, বিশেষত ৯/১১ পরবর্তী সময়ে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অভিবাসন নীতি প্রয়োগে নিয়োজিত করা হয়। তাদের মূল কাজ ছিল কূটনীতিকদের সুরক্ষা এবং ভিসা জালিয়াতি রোধ করা, কিন্তু এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশিদের খোঁজে বের করার কাজও করছেন।
এই সিদ্ধান্তে, মার্কিন সরকারের বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থা তাদের কর্মীদের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়ন করতে দায়িত্ব পেয়েছে, তবে বেশিরভাগ কর্মকর্তাই অভিবাসন আইন নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, যা সংস্থাগুলোর মধ্যে কাজের প্রভাবকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
এদিকে, ট্রাম্পের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে রাজনৈতিক বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতারা ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপকে অপচয় হিসেবে অভিহিত করেছেন, এবং মনে করছেন যে, এসব ব্যবস্থা অন্য গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের তদন্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের দৃষ্টিতে বিশ্বাসী এবং তাদের ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করে।
চলতি বছরের জানুয়ারির নির্বাহী আদেশের পর, টেক্সাসসহ বেশ কিছু অঞ্চলে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা কমেছে, তবে এই পদক্ষেপের ফলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আটক ও বহিষ্কৃত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং তা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই অভিযানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছেই, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যক্রমের ফলাফল মিশ্র হলেও, তার নীতি অনেক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন