যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, টেক্সাস, ওকলাহোমা এবং আরকানসাসেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
টেক্সাসে এক ভয়াবহ ধূলিঝড়ের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ওকলাহোমা ও আরকানসাসেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার বিকেল পর্যন্ত টেক্সাস, মিসৌরি ও ইলিনয়সহ ছয়টি অঙ্গরাজ্যে ২ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
জাতীয় আবহাওয়া পরিসেবার (এনডব্লিউএস) তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় মিসিসিপি, পূর্ব লুইজিয়ানা ও পশ্চিম টেনেসির কিছু এলাকায় আরও টর্নেডোর আশঙ্কা রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও সতর্কতা
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আলাবামা ও আরকানসাসসহ কয়েকটি অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব বন্যা প্রাণঘাতী হতে পারে বলে জানিয়েছে এনডব্লিউএস।
শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় মিসিসিপিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টর্নেডো সতর্কতা জারি করা হয়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা এসব অঞ্চলে ‘বিপজ্জনকভাবে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী’ টর্নেডোর আশঙ্কা করেছেন।
ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার অভিযান
মিসৌরির গভর্নর মাইক কেহো জানিয়েছেন, প্রবল ঝড় ও টর্নেডোর আঘাতে তাদের রাজ্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং অনেক প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, মিসৌরির ২৫টি কাউন্টিতে অন্তত ১৯টি টর্নেডো আঘাত হেনেছে।
আরকানসাসে তিনজনের মৃত্যু ও ২৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে গভর্নর সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্পও সম্ভাব্য ঝড়ের কারণে তার রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
টেক্সাস ও ওকলাহোমার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ
ওকলাহোমায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে টেক্সাসে ধূলিঝড়ের কারণে ৩৮টি গাড়ির ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে তিনজনের মৃত্যু হয়।
টেক্সাস ও ওকলাহোমায় প্রচণ্ড ঝড়ের ফলে ১০০টিরও বেশি দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।
ওকলাহোমার ফরেস্ট্রি সার্ভিস জানিয়েছে, ‘৮৪০ রোড ফায়ার’ নামে পরিচিত একটি দাবানলে এরই মধ্যে ২৭ হাজার ৫০০ একর এলাকা পুড়ে গেছে। এটি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর ভয়াবহতা
টর্নেডো সাধারণত তখনই সৃষ্টি হয়, যখন উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস ওপরে উঠে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে আসে। এতে প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, যা তীব্র ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘টর্নেডো অ্যালি’ নামে পরিচিত অঞ্চল প্রায়ই এই ধরনের দুর্যোগের শিকার হয়।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডো সংক্রান্ত ঘটনায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে টেক্সাসে ৯ জন, ওকলাহোমায় ৮ জন, আরকানসাসে ৫ জন ও মিসৌরিতে ১ জন মারা যান।
মে ও জুন মাসকে টর্নেডোর মূল মৌসুম ধরা হলেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বছরের যে কোনো সময়ই টর্নেডো আঘাত হানতে পারে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিবিএস নিউজ
মন্তব্য করুন