ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মার্কিন অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বেড়েছে, অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) সিপ্রি এর ওই গবেষণা বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মার্কিন অস্ত্র রপ্তানি আগের পাঁচ বছরের তুলনায় এক পঞ্চমাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশ।
গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র শিল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সিপ্রি ইনস্টিটিউট কর্তৃক ঘোষিত অনুমান অনুসারে, গত দুই দশক ধরে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানিতে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ গড়ে ৩৫ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা ৮শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে যা দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ ফ্রান্সের চেয়ে চারগুণ বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যুদ্ধ শুরুর পর ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল সময়ে ইউক্রেন তার পূর্ববর্তী বছর গুলোর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি অস্ত্র কিনেছে। একই সময়ে ক্রেমলিনের সম্প্রসারণবাদের ভয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোও তাদের অস্ত্র আমদানি ১৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
তিন বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তৎপরতা দেখাচ্ছেন ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে ট্রাম্প প্রশাসন যখন ইউক্রেনের উপর চাপ প্রয়োগ করছে ঠিক সেসময় মার্কিন অস্ত্র বাণিজ্যের এ রিপোর্ট প্রকাশিত হল। ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের মূল্য বাবদ ৫০০ বিলিয়ন ডলার দাবি করছেন। এজন্য ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলিতে মার্কিন প্রবেশাধিকার চাইছেন তিনি।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের মার্কিন সহায়তার বিবরণ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস কর্তৃক বরাদ্দ করা মার্কিন তহবিলের ১৭৪ বিলিয়ন ডলারের একটি বড় অংশ আসলে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পে গেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা ঠিকাদার : আমেরিকান কোম্পানি লকহিড
আমেরিকান কোম্পানি লকহিড মার্টিন বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা ঠিকাদার কোম্পানি। কোম্পানিটি ২০২২ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে ৪৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্ডার পেয়েছে, যা ২০২২ সালে তার মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ। পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরিকারী এই কোম্পানিটি অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন বিমান বাহিনীর ভিত্তি হিসেবে তার অবস্থান বজায় রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
মার্কিন কোম্পানি রেথিয়ন
আরটিএক্স করপোরেশন যা (রেথিয়ন) নামেও পরিচিত, ২০২২ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে ২৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যে অস্ত্র নির্মাণ অর্ডার পেয়েছে। কোম্পানিটি রাজস্বের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা কোম্পানি, যদিও এর প্রতিরক্ষা রাজস্ব কোম্পানির মোট রাজস্বের মাত্র ৫৯ শতাংশ। কোম্পানিটি চলমান সংঘাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো, মার্কিন অস্ত্র চালানের সবচেয়ে বেশি অংশ পশ্চিম এশিয়ার পরিবর্তে ইউরোপে গেছে, যদিও সৌদি আরব এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্রের বৃহত্তম আমদানিকারক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসময় প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত রাশিয়াও ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে এই খাতে তাদের রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ বছরে দেশটির অস্ত্র রপ্তানি কমেছে ৬৪ শতাংশ।
মন্তব্য করুন