রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এই সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির আলোচনা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে আত্মবিশ্বাসী এবং আমরা আশা করছি, এই সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি কূটনৈতিকভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাট ওয়াল্টজ এবং অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট কিয়েভ এবং মস্কোর সঙ্গে নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধের অবসানের পাশাপাশি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ব্যবহার নিয়ে একটি চুক্তির ব্যাপারেও আলোচনা করছে।
ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে, কারণ এটি আমেরিকান অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জেলেনস্কির বিকল্প নেই, দাবি ট্রাম্পের
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, জেলেনস্কির সামনে এখন শান্তি আলোচনায় আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমরা চাই ইউক্রেন দ্রুততম সময়ে যুদ্ধ বন্ধ করুক এবং এটি তাদের জন্যও লাভজনক হবে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও চুক্তির সম্ভাবনা
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রচেষ্টা সফল হলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়বে।
বিশাল অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা ট্রাম্পের
ওভাল অফিসে ২২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমরা আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এতে আমাদের ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলার ফেরত আসবে।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, যা অনেক আগেই স্বাক্ষরিত হওয়া উচিত ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের পথ সুগম হবে এবং আমেরিকার প্রতিরক্ষা খাতে অর্থ ফেরানোর সুযোগ তৈরি হবে।
চীনের প্রভাব কমাতে পশ্চিমাদের কৌশল?
বিশ্ববাজারে রেয়ার আর্থ মিনারেল বা বিরল খনিজ সম্পদের অন্যতম উৎস হলো ইউক্রেন। এসব খনিজ পদার্থ অস্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন পণ্যের জন্য অপরিহার্য। চীন বর্তমানে এই খাতে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা চীনের প্রভাব কমাতে চায়।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি রক্ষার কৌশল নিয়ে এখনও কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে।
যদি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টা সফল হয়, তাহলে তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবশেষে অবসানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে। বিশ্ববাসী এখন সেই ঘোষণা শোনার অপেক্ষায়।
মন্তব্য করুন