মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, দেশটির সব সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে তাদের কাজের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। তা না হলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাস্ককে সরকারি ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগে ‘আরও আগ্রাসী’ হওয়ার আহ্বান জানানোর পর তিনি এ ঘোষণা দেন। খবর এএফপি।
গত মাসে শপথ নেওয়ার পর থেকেই সরকারি কর্মচারী ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন ট্রাম্প। এতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন ইলন মাস্ক। শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প মাস্ককে নবগঠিত সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই)-এর দায়িত্ব দেন এবং সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হিসেবে সরকারি ব্যয় হ্রাসকে নির্ধারণ করেন।
মাস্ক জানান, ‘গত সপ্তাহে কে কী কাজ করেছেন, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সব কর্মকর্তার কাছে শিগগিরই একটি ইমেইল পাঠানো হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, এই ইমেইলের জবাব না দেওয়াকে ‘পদত্যাগ’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউএস অফিস অব পারসোনেল ম্যানেজমেন্ট (ওপিএম) থেকে পাঠানো এই ইমেইলের বিষয়ে তারা একটি কপি সংগ্রহ করেছে। ইমেইলের বিষয়বস্তু অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের বুলেট পয়েন্ট আকারে গত সপ্তাহের ‘৫টি অর্জন’ জমা দিতে বলা হয়েছে।
ইমেইলের বিষয় (সাবজেক্ট) লাইনে লেখা ছিল- ‘গত সপ্তাহে আপনি কী করেছেন?’ এবং সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। তবে এতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, জবাব না দিলে চাকরিচ্যুত করা হবে।
এ বিষয় নিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বৃহত্তম ইউনিয়ন ‘দ্য আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িস’ (এএফজিই) এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে। ইউনিয়নের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট এভারেট কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ট্রাম্প প্রশাসন এবং মাস্ক সরকারি কর্মচারীদের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা পোষণ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাজারো সাবেক সেনা কর্মকর্তা, যারা এখন বেসামরিক সরকারি চাকরিতে জাতির সেবা করছেন, তাদের এভাবে নিজের কাজের যৌক্তিকতা প্রমাণে বাধ্য করা অত্যন্ত নির্মম ও অপমানজনক।’
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মচারী তাদের এজেন্সি থেকে পরামর্শ পেয়েছেন- এই ইমেইলের উত্তর না দেওয়াই ভালো এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
পরে মাস্ক তার আগের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে এক্সে (টুইটারে) নতুন পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়া খুবই সহজ। শুধু অর্থপূর্ণ বাক্য সংবলিত কয়েকটি বুলেট পয়েন্ট লিখে পাঠালেই চলবে।’
তিনি আরও জানান, অনেক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে ইমেইলের জবাব দিয়েছেন এবং তাদের ‘পদোন্নতি’ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
ট্রাম্প শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ মাস্কের কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, ‘মাস্ক দারুণ কাজ করছেন, তবে আমি চাই তিনি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠুন।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে হবে।’ মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি ততদিন পর্যন্ত ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করবেন, যতদিন তার উদ্যোগগুলো কার্যকর হবে।
ট্রাম্প শনিবার রক্ষণশীল অধিকারকর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, ‘ইলন দারুণ কাজ করছেন। তিনি সবচেয়ে উদ্বেগজনক কিছু দুর্নীতি চিহ্নিত করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করে ইলনের পদমর্যাদা কী? আমি বলি, তিনি একজন দেশপ্রেমিক।’
মাস্ক জানিয়েছেন, ডিওজিই তাদের ওয়েবসাইটে সরকারি ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগের বিস্তারিত প্রকাশ করছে, যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে এবং তাকে জবাবদিহির আওতায় আনছে।
মন্তব্য করুন