মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য এবং সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা সৃষ্টি করেছেন। কখনো গ্রিনল্যান্ড দখল করার হুমকি, কখনো পানামা খাল নিয়ে বিতর্ক, আর কখনো কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য করার প্রস্তাব- এভাবেই তার মন্তব্য আলোচিত হচ্ছে।
তবে, এখন নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ট্রাম্পের এক সিদ্ধান্ত, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন : ট্রাম্পের নতুন উদ্যোগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনকে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন যে, মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘গালফ অব আমেরিকা’ রাখা হবে। এই নাম পরিবর্তনকে সমর্থন করলেও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে।
বার্তা সংস্থা এপি তাদের সম্পাদকীয় নীতিতে স্পষ্ট করে জানায়, তারা যেভাবে পৃথিবীর স্থানগুলোকে পরিচিত করে আসছে, সেভাবেই তা প্রকাশ করে থাকে। আর মেক্সিকো উপসাগরের নাম আন্তর্জাতিকভাবে ‘গালফ অব মেক্সিকো’ হিসেবেই পরিচিত।
এপির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বিরোধ
এই নামকরণের বিরোধের পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন এবং এপির মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের মধ্যে এপির সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করেছে, কারণ এপি ট্রাম্পের আদেশের প্রতি সম্মতি জানায়নি।
হোয়াইট হাউসের মতে, ‘গালফ অব আমেরিকা’ নামকরণ বৈধ এবং সংবাদ মাধ্যম হিসেবে এপিকে তা মেনে চলতে হবে।
অপরদিকে বার্তা সংস্থা এপি এই সিদ্ধান্তকে ‘সম্পাদকীয় স্বাধীনতা’ এবং ‘ভৌগোলিক নামের সঠিকতা’ হিসেবে রক্ষা করছে। এই নাম পরিবর্তন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই প্রযোজ্য, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এখনো ‘গালফ অব মেক্সিকো’ নামটি বহাল রয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও এপির প্রতি আক্রমণ
সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এপিকে ‘কট্টর বামপন্থি সংগঠন’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এপি এখনো স্বীকার করতে রাজি নয় যে, গালফ অব মেক্সিকো এখন গালফ অব আমেরিকা। তারা সবসময় সবাইকে অসম্মান করে এবং আমাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই, তবে আমাদের জন্য এটি নীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।’
এপির অবস্থান ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এপি, যেটি ১৮০ বছরের পুরনো একটি সংবাদ সংস্থা, তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
সংস্থাটি জানিয়ে দিয়েছে, তারা সর্বাধিক পরিচিত ভৌগোলিক নাম ব্যবহার করে এবং এটি তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালার অংশ।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে এপির রিপোর্টিংকে অনেক সংবাদপত্র এবং চ্যানেল অনুসরণ করে, তাই এই সংস্থার ওপর চাপ প্রয়োগের ঘটনা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
কে জিতবে : ট্রাম্পের একগুয়েমি নাকি সম্পাদকীয় নীতি?
এখন প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের একগুয়েমি শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে নাকি সংবাদ সংস্থার সম্পাদকীয় নীতি? এটি শুধু এপির জন্যই নয়, সব গণমাধ্যমের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সংবাদ সংস্থাগুলোর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন যদি সংবাদ মাধ্যমের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে, তবে এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জনসাধারণের তথ্য পাওয়ার অধিকারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এখন দেখতে হবে, ট্রাম্প তার রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে সংবাদ মাধ্যমের প্রতি তার আদেশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন, নাকি এপি এবং অন্যান্য সংবাদ সংস্থাগুলোর সম্পাদকীয় নীতি ট্রাম্পের আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করবে।
সূত্র : এএফপি
মন্তব্য করুন