কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ ‘অবশ্যই’ শুরু হবে : ট্রাম্পের দূত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কিছু জটিলতা সত্ত্বেও ‘অবশ্যই শুরু হতে যাচ্ছে’।

এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা গাজার পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটি বাস্তবায়ন দেখতে চান। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ এই কথা বলেন।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি : একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ফলে গাজায় এক সপ্তাহের দীর্ঘ বিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ছিল স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এটি মানবিক সহায়তার প্রবাহ এবং বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু, প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের কাঠামো নির্দিষ্ট ছিল। তবে দ্বিতীয় ধাপে যা ঘটতে যাচ্ছে তা আরও জটিল এবং তার প্রভাব পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক কাঠামোতে পড়তে পারে।

যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপের চ্যালেঞ্জ

উইটকফ বলেন, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা যথেষ্ট জটিল হতে পারে। কারণ এই ধাপে গাজার যুদ্ধ শেষ করতে হবে, পাশাপাশি হামাসকে গাজার শাসন থেকে সরানোরও বিষয়টি আলোচনায় থাকবে।

তবে, চুক্তির মধ্যে হামাসকে সরানোর ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, তবে ট্রাম্প প্রশাসন এবং ইসরায়েল এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

উইটকফ আরও বলেন, দ্বিতীয় ধাপটি আরও ‘জটিল’ হতে যাচ্ছে, কারণ এটি শুধু যুদ্ধের অবসান নয়, বরং হামাসের শাসনকেও চ্যালেঞ্জ করছে।

যুদ্ধবিরতি বন্দি মুক্তির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে ১৯ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সেনাকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।

যদিও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, হামাসের হাতে বন্দি জীবিত সেনাদের সংখ্যা ১০ জনেরও কম, তবুও উইটকফ বলছেন যে, আমরা বিশ্বাস করি যে, সবাই জীবিত রয়েছে। তিনি আরও জানান, এদের মধ্যে ৩টি বা ৪টি সেনা হবে, বাকি বেসামরিক নাগরিক। তবে, এ সংখ্যা এবং তাদের পরিচয় নিয়ে আলোচনা চলমান।

আলোচনার স্থান এবং সময়কাল

উইটকফ উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় ধাপের জন্য যে আলোচনা চলবে তা শুরু হবে মিসরের কায়রো অথবা কাতারের দোহায়, যেখানে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে মিসর এবং কাতারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। উভয় দেশ এ বিষয় নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের কাছ থেকে সহায়তা পেতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

ট্রাম্পের গাজার পুনর্বাসন পরিকল্পনা

ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য শুধু যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা নয়, বরং গাজার জনগণের জন্য পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও নির্ধারণ করা।

উইটকফ বলেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য গাজার প্রায় ২০ লাখ জনগণের জন্য পুনর্বাসনের উপযুক্ত স্থান নিশ্চিত করা। এ জন্য, মিসর ও জর্ডানসহ কিছু দেশ ইতোমধ্যে তাদের মানবিক সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এই দেশগুলো বলেছে, আমরা মানবিক প্রচেষ্টায় অংশ নিতে চাই, যা প্রক্রিয়াটিকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পদক্ষেপ

যদিও দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে, তবে সেটি আদৌ সফল হবে কিনা তা সময়ই বলবে। এটি যেমন গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সেখানে এক স্থায়ী শান্তির অবস্থাও তৈরি করতে পারে।

উইটকফের ভাষায়, এটি শুরু হবে এবং আমরা আশা করছি যে, এটি শান্তির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সফলতা সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলীয় বাহিনী এখন পর্যন্ত হামাসকে বেশ ধ্বংস করেছে।

তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, আমরা কাজটি শেষ করিনি, তবে আমরা হামাসকে একটি সামরিক শক্তি হিসেবে ধ্বংস করব।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের একটি নতুন পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি গাজার জনগণের জন্য একটি ভিন্ন ভবিষ্যৎ তৈরি করা সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক উদ্যোগ : মিসর ও জর্ডানের ভূমিকা

মিসর ও জর্ডান গাজার পুনর্বাসন এবং শাসনের পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। বিশেষত, মিসরের পরিকল্পনায় গাজা উপত্যকার দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সেখানে বাস করা ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। মিশরের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগটি সমর্থনযোগ্য হতে পারে, যদি তারা গাজার ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়।

নির্দিষ্ট লক্ষ্য : মানবিক প্রচেষ্টা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শেষ পর্যন্ত, গাজার যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ এবং এর সাথে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের লক্ষ্য হলো গাজার জনগণের জন্য শান্তি, পুনর্বাসন এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা। এই আলোচনাগুলো কেবল যুদ্ধের অবসান নয়, বরং গাজার জনগণের একটি স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

এখন, বিশ্বের নানা দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল এই উদ্যোগে অংশ নিয়ে মানবিক সাহায্য প্রদান করছে, যা গাজার ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে জবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ

শিবির নেতার ওপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনায় সাদিক কায়েমের স্ট্যাটাস

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

ভাষা শহিদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

ভাষা শহীদদের প্রতি আইজিপির শ্রদ্ধা

আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে : জুয়েল

একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

শিক্ষার্থীদের জন্য ঘর বানিয়ে দিল প্রবাসী সংগঠন লিটলকেয়ার

মহান শহীদ দিবস আজ, শ্রদ্ধাবনত জাতি

টঙ্গীতে শিবির নেতার ওপর ছাত্রদলের হামলা

১০

‘সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করবেন না’

১১

প্রথম পাতাল মেট্রোরেল কীভাবে চলবে, জানাল কর্তৃপক্ষ

১২

রাবিতে দুই দিনব্যাপী গবেষণা মেলা শুরু শনিবার

১৩

মাটির তৈরি সব বহুতল ভবন টিকে আছে হাজার বছর

১৪

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

১৫

কুয়েটের উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করায় ঢাবি সাদা দলের উদ্বেগ

১৬

আন্দোলনে আহত খোকনের চিকিৎসা হবে বিদেশে 

১৭

অক্টোবরে তপশিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরে নির্বাচন দিন : আসাদুজ্জামান রিপন

১৮

জবিতে ‘চেতনায় একুশ’ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

১৯

চট্টগ্রাম ওয়াসায় দুদকের অভিযান, মিলল অনিয়মের প্রমাণ

২০
X