গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ট্রাম্পের পাশে বসেই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ না করেই গাজা উপত্যকা পুনর্গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আরব দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার সুরক্ষিত রাখাই তাদের অগ্রাধিকার।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ট্রাম্পের প্রস্তাব ও বাদশাহর প্রত্যাখ্যান
মার্কিন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, গাজাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে নেব এবং এটিকে নতুনভাবে সাজাব। এটি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি আধুনিক সমুদ্রসৈকত হয়ে উঠবে, যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, গাজার বাসিন্দাদের প্রতিবেশী দেশগুলো- বিশেষ করে মিসর ও জর্ডানে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
তবে ট্রাম্পের পাশে বসেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ না করেই গাজা পুনর্গঠন করা হবে। এটাই আরব বিশ্বের সম্মিলিত অবস্থান।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘মানবিক সংকট নিরসন ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা সবার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে বাস্তুচ্যুত করা এই সংকটের সমাধান হতে পারে না।’
আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আরব দেশগুলো একযোগে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মিসর, কাতার, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ জর্ডানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, শেষ পর্যন্ত মিসর ও জর্ডান তার প্রস্তাবে রাজি হবে, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জর্ডান ও মিসরে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থাকবে, যেখানে গাজাবাসী পুনর্বাসিত হতে পারবে।’
জর্ডানকে সহায়তা বন্ধের ইঙ্গিত
বৈঠকে ট্রাম্প একপর্যায়ে জর্ডানের প্রতি আর্থিক সহায়তা কমানোরও ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জর্ডান ও মিসরকে বিপুল অর্থ সহায়তা দিচ্ছি। তবে এটি কোনো হুমকি নয়, আমরা শুধু বাস্তবতা তুলে ধরছি।’
বাদশাহ আবদুল্লাহর কৌশলী জবাব
ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের পরও বাদশাহ আবদুল্লাহ শান্ত ও দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখেন। ট্রাম্প তাকে গাজাবাসীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের স্বার্থই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গাজার দুই হাজার শিশুকে চিকিৎসার জন্য জর্ডানে নিতে পারি।’
এ সময় ট্রাম্প বাদশাহ আবদুল্লাহর ‘গাজা উপত্যকার দুই হাজার শিশুর চিকিৎসা’ প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও গাজা নিয়ে তার অবস্থান অপরিবর্তিত রাখেন।
বাদশাহ আবদুল্লাহ আরও জানান, ‘আরব নেতারা একে একে ওয়াশিংটনে আসবেন এবং যৌথভাবে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করবেন। ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি সম্ভব নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি, বাদশাহ আবদুল্লাহর ছেলে যুবরাজ হুসাইন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ নির্দেশনা
ট্রাম্পের ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জর্ডানের বাদশাহর প্রকাশ্য প্রত্যাখ্যানের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রয়োগ করে জর্ডান ও মিসরকে রাজি করানোর চেষ্টা করবে, তবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদবিরোধী আরব বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মন্তব্য করুন