গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে ধৈর্য হারাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া তিন ইসরায়েলি জিম্মির শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের দুর্দশার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রতি ট্রাম্পের সহানুভূতি যতটা প্রকাশ্য, ফিলিস্তিনি বন্দিদের প্রতি তার উদাসীনতা ততটাই স্পষ্ট।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিপ্রাপ্ত তিন ইসরায়েলি বন্দির শারীরিক অবস্থা দেখে হতবাক হয়েছেন ট্রাম্প।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিউ অরলিন্সে সুপার বোলের উদ্দেশ্যে এয়ার ফোর্স ওয়ানে থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলি জিম্মিদের হলোকাস্টে বেঁচে যাওয়া মানুষদের মতো দেখাচ্ছে। তাদের অবস্থা ভয়াবহ।
তিনি আরও বলেন, আমি জানি আমাদের একটি চুক্তি রয়েছে... তারা ধীরে ধীরে মুক্তি পাচ্ছে... কিন্তু তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমি জানি না আমরা আর কতদিন এটি সহ্য করতে পারব... এক সময় আমাদের ধৈর্য হারিয়ে যাবে।
মুক্তিপ্রাপ্ত তিন বন্দি হলেন—ওহাদ বেন অ্যামি, ইলি শরাবি এবং ওর লেভি। তাদের অবস্থা আগের ১৮ জন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির তুলনায় অনেক বেশি শোচনীয় ছিল।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের দুর্দশা নিয়ে নীরবতা
ট্রাম্প যখন ইসরায়েলি বন্দিদের দুরবস্থার কথা বলছিলেন, তখনই ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দির অবস্থাও ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। কিন্তু এই বিষয়ে ট্রাম্প ও তার মিত্ররা কোনো মন্তব্য করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের দুর্দশা এবং কারাগারে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব।
ফিলিস্তিনে চলমান দমনপীড়ন
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের দিনই অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী নিহত হন। অধিকৃত নূর-শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানে প্রাণ হারান তিনি এবং তার গর্ভের সন্তানও মারা যায়। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনে প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
রাজনৈতিক পক্ষপাতের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও অবস্থান ইসরায়েলি নীতির প্রতি তার একপাক্ষিক সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও, ফিলিস্তিনে প্রতিদিন যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে, তা নিয়ে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিরই ধারাবাহিকতা, যেখানে ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তবে এই পক্ষপাতমূলক নীতি শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন