মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকা দখল ও পুনর্নির্মাণের জন্য ইসরায়েল প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করবে। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার প্রশাসনের কোনো তাড়াহুড়ো নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, আমরা এতে কোনো তাড়াহুড়ো করছি না।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুসারে, গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের সময় ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তর করা হবে। তবে কায়রো ও আম্মান আগেই এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। মিসর ও জর্ডান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা গাজার সংকটে সরাসরি জড়াতে চায় না এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজস্ব ভূমিতেই থাকার অধিকারকে সমর্থন করে।
গাজা দখল ও পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনা
৪ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। এতে গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে পুনর্বাসনের প্রস্তাবও ছিল। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে, তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই পরিকল্পনা খুব ভালোভাবে গৃহীত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল এস্টেট দৃষ্টিভঙ্গি
ট্রাম্প বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্র এটিকে একটি রিয়েল এস্টেট লেনদেন হিসাবে দেখছে, যেখানে আমরা বিশ্বের এই অংশে বিনিয়োগকারী হব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সেখানে সেনা মোতায়েন করার প্রয়োজন নেই। ইসরায়েল আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করবে। তাদের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকবে। আমরা সেখানে সরাসরি সেনা না পাঠালেও, আমরা সেখানে থাকব। কারণ আমরা বিনিয়োগ করব।
স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, তবে দ্রুততার নয়
গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা কেবল স্থিতিশীলতা দেখতে চাই। কিন্তু আমাদের এতে কোনো তাড়াহুড়ো নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, গাজার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে ইসরায়েলকে প্রধান ভূমিকা দিতে চায় ওয়াশিংটন। তবে এতে ফিলিস্তিনিদের ভূমিকা কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মুসলিম দেশগুলো এবং জাতিসংঘ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গৃহীত যে কোনো পরিকল্পনা অঞ্চলটিতে সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ফিলিস্তিনি নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এটিকে ‘ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের আরেকটি কৌশল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গাজা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে এবং এর প্রভাব কী পড়বে ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যতের ওপর?
মন্তব্য করুন