টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রচ্ছদ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে, ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্টের রেজল্যুট ডেস্কের পেছনে বসে আছেন, হাতে কফির পেয়ালা। এই প্রচ্ছদ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি কেবল চমক সৃষ্টির জন্য নয়, বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর মাস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত বহন করছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নেপথ্যে মাস্কের ভূমিকা
বর্তমানে মাস্কের হাতে যে প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে, তা নজিরবিহীন। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ (ডজ) পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন, যা মূলত সরকারি খাতের সংস্কারের দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মাস্ককে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী করেছে, যার ফলে লাখো সরকারি কর্মচারী এখন তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্কের সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রশাসন দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে এবং তিনি প্রায় কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাস্তব সিদ্ধান্তগুলোর নিয়ন্ত্রণ হয়তো মাস্কের হাতেই চলে যাচ্ছে, যেভাবে স্টিভ ব্যানন প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের ছায়া উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন।
টাইম ম্যাগাজিনের বার্তা : মাস্ক কি ‘প্রকৃত ক্ষমতাধারী’?
টাইম ম্যাগাজিনের এই প্রচ্ছদ ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাস্ককে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়ে দেখানো হয়েছে, যা বোঝাতে চায়, তিনিই প্রকৃত ক্ষমতাধারী। এই ধরনের চিত্রায়ন অতীতে দেখা গেছে ২০১৭ সালে, যখন স্টিভ ব্যাননকে ‘দ্য গ্রেট ম্যানিপুলেটর’ নামে অভিহিত করে টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ করেছিল। ব্যাননের মতোই মাস্কও কি ট্রাম্পের ছায়ায় থেকেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্কের ব্যাপক স্বাধীনতা, সরকারি কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণে তার প্রভাব স্পষ্ট। টাইমের প্রতিবেদন অনুসারে, মাস্ক বর্তমানে কেবলমাত্র ট্রাম্পের কাছে জবাবদিহি করেন এবং ট্রাম্পও তাকে তার নিজস্ব নীতির প্রতিফলন ঘটানোর জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া : অসন্তুষ্টি না কৌশল?
টাইমের এই প্রচ্ছদ নিয়ে যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, ‘টাইম ম্যাগাজিন কি এখনো ব্যবসায় টিকে আছে? আমি তো জানতাম না!’ যদিও এটি একটি হাস্যরসাত্মক উত্তর মনে হতে পারে, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য তার ইমেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অতীতে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবি বসাতে নকল কভারের সাহায্য নিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে বিতর্ক তৈরি করেছিল।
তাহলে, মাস্ককে নিয়ে টাইমের এই প্রচ্ছদ কি ট্রাম্পের জন্য অস্বস্তিকর? বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দুভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে : ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে মাস্ককে সামনে রেখে প্রশাসনের কঠিন সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করাচ্ছেন, যাতে পরবর্তীতে এর দায় এড়াতে পারেন। মাস্ক ধীরে ধীরে ট্রাম্পের ওপর ছায়া ফেলে আসল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হয়ে উঠছেন, যা ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে।
মাস্ক বনাম ট্রাম্প : ভবিষ্যতে কী হবে?
মাস্ক ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখনো দৃঢ় মনে হলেও, ইতিহাস বলছে, ট্রাম্প কখনোই দীর্ঘ সময় কাউকে তার ছায়ায় থাকতে দেন না। স্টিভ ব্যানন, জন বোল্টন বা রেক্স টিলারসনের মতো ব্যক্তিরা এক সময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, পরে তার কোপে পড়েছেন। তাহলে মাস্কের পরিণতি কী হবে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি মাস্ককে নিয়ে ‘তিনি প্রকৃত ক্ষমতাধারী’ এই ধারণা আরও বেগবান হয়, তবে ভবিষ্যতে ট্রাম্প হয়তো তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন। তবে, মাস্কের মতো শক্তিশালী ও সম্পদশালী ব্যক্তিত্ব ট্রাম্পের চেয়েও স্বাধীনভাবে খেলতে পারেন।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ শুধু একটি ছবি নয়, বরং এটি মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকলেও, নেপথ্যে কি মাস্কই প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী? সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
মন্তব্য করুন