ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এ তথ্য জানায়। যেখানে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন গোপনে গাজা উপত্যকায় হামাসের পেছনে কোটি কোটি ডলার ঢেলেছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সহায়তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সিনেটর টেড ক্রুজ দ্য ডেইলি কলারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান।
টেড ক্রুজের দাবি, এই অর্থের মধ্যে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ রয়েছে, যা কখনোই কোনো নির্দিষ্ট হিসাব দেয়া হয়নি। বাইডেন প্রশাসনের এই কার্যক্রম রিপাবলিকানদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। টেড ক্রুজ এই বিষয়টিকে গোপনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকমী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে সহায়তা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বাইডেন প্রশাসনের উদ্দেশ্য
বাইডেন প্রশাসনের অর্থ সহায়তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে টেড ক্রুজ বলেন, বাইডেন প্রশাসন জানতো, গাজা উপত্যকায় যে অর্থ পাঠানো হচ্ছে, তা হামাসের উপকারে আসবে। কিন্তু তবুও তারা এই কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। তার মতে, মার্কিন জনগণের অধিকার রয়েছে তাদের ট্যাক্সের অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা জানার এবং এই ব্যয় দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
১৩০ কোটি ডলার সহায়তা
ডেইলি কলারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাইডেন প্রশাসন মার্কিন করদাতাদের প্রায় ১৩০ কোটি ডলার ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংস্থা ও গোষ্ঠীকে সাহায্য হিসেবে দিয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু গোষ্ঠী জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বা সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত। এই সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশ ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর কাছে গেছে, যা হামাসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছে।
রিপাবলিকানদের অভিযোগ
এর আগেও সিনেটর টেড ক্রুজ বাইডেন প্রশাসনকে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেওয়া একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় লাখো ডলার ঢেলেছে, যা হামাস আত্মসাৎ করেছে। টেড ক্রুজ আরও বলেন, এই অর্থ ফিলিস্তিনের জঙ্গি সংগঠনগুলো, বিশেষ করে হামাস, নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
ইউএসএআইডির ভূমিকা
এছাড়াও, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রিপাবলিকানরা মার্কিন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ইউএসএআইডিকে চিঠি পাঠিয়ে হামাসকে সহায়তা নিয়ে সতর্ক করেন। তাদের দাবি, ইউএসএআইডি যে সাহায্য প্রদান করে, তার কিছু অংশ হামাসের পেছনে যায় এবং সে কারণে এই সংস্থার কার্যক্রমে আরও বেশি জবাবদিহি প্রয়োজন।
হামাস ও ইরান
টেড ক্রুজের মতে, বাইডেন প্রশাসনের এই সহায়তা শুধু হামাসের শক্তি বৃদ্ধি করেছে না, বরং ইরানও এর মাধ্যমে লাভবান হয়েছে। তিনি বলেন, এতদিনে মোট ১০ হাজার কোটি ডলার ইরানের কাছে গেছে, যা জঙ্গিবাদের বিস্তারে ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া, টেড ক্রুজ দাবি করেন, ৭ অক্টোবরের হামলার অর্থায়নের সাথে বাইডেন প্রশাসনের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে এবং এটি ছিল একটি ভয়াবহ আক্রমণ, যা ছিল হলোকাস্টের পর ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে বড় গণহত্যার ঘটনা।
বাইডেন প্রশাসনের এই অর্থ সহায়তা নিয়ে বিতর্কিত প্রশ্নগুলো এখনো উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। রিপাবলিকানরা দাবি করছেন, এই সহায়তার ফলে হামাস এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তবে বাইডেন প্রশাসন এখনো এসব অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য কোনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।
মন্তব্য করুন