মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ, যা উত্তর আমেরিকা ছাড়িয়ে বিশ্বের অর্থনীতিতে মারাত্মক অভিঘাত সৃষ্টি করার হুমকি দিয়েছিল, বর্তমানে আপাতত স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।
ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন, যা কিছুটা শিথিলতার আভাস দিচ্ছে। তবে এই স্থগিতাদেশের পরেও প্রশ্ন থেকে যায়—এই ৩০ দিন পর কী ঘটবে? কারা পিছু হটল এবং আগামীতে কী প্রভাব পড়বে?
ট্রাম্পের কৌশল এবং তার ফলাফল
প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের ঝুঁকিপূর্ণ কৌশলটি কাজে লেগেছে। তিনি মেক্সিকো ও কানাডার কাছে আরও কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং ফেন্টানিল চোরাচালান প্রতিরোধে উদ্যোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন।
ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় এই কৌশলকে একটি সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এতে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়লেও মার্কিন সরকারের উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ হয়েছে।
তবে শুল্ক আরোপের বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন নয়। এর আগে তিনি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। এবার মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, তবে চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা কার্যকর হবে।
কানাডার জন্য একটি অস্থায়ী বিজয়
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই শুল্ক স্থগিতাদেশকে একটি রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে দাবি করতে পারেন। তিনি একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন, তবে ৩০ দিন পর যদি শুল্ক কার্যকর হয়, তবে পরিস্থিতি ফের জটিল হয়ে উঠবে।
কানাডা ইতোমধ্যেই সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ১৩০ কোটি কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দ করেছে এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেন্টানিল চোরাচালান প্রতিরোধে আরও উদ্যোগী হয়েছে।
মেক্সিকোর জন্য সময় আদায়
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউমও এই সমঝোতার মধ্য দিয়ে সময় আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত করতে সমর্থ হয়েছেন এবং মেক্সিকো সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ট্রাম্পের কাছ থেকে শেইনবাউম আরও এক মাস সময় পেয়েছেন, যার মধ্যে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ফেন্টানিল চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ কমিটি গঠন করবেন।
ভবিষ্যৎ কী ইঙ্গিত দেয়?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ৩০ দিনের পর যদি শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে এর প্রভাব কী হবে? এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসায়ীরা বাজারে আস্থা রাখতে পারছেন না এবং নতুন কারখানা খোলার অথবা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিচ্ছেন।
ট্রাম্পের এই বাণিজ্য যুদ্ধ, যদিও আপাতত স্থগিত, তবে এটি কানাডা-মেক্সিকো সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন