প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত সেরে ওঠার আগেই অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এতে কয়েক কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। জার্মানদের নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মিত্রশক্তির সেনারা। কিন্তু দীর্ঘ এই যুদ্ধে চারদিকে হতাহত আর ক্লান্তি সেনাদের মনে হতাশা জাগিয়ে তুলেছিল। জার্মান বাহিনী নিজেদের সেনাদের দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য মাদক সেবন করিয়েছিল। অর্ধযুগ ধরে চলা বিরামহীন এই যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীকেও শক্তি যোগায় বিশেষ এক পানীয়। সেই পানীয় পানে মুহূর্তেই চাঙা হয়ে উঠত মার্কিন সেনারা।
বিশেষ এই পানীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে আফ্রিকার ইথিওপিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য মুসলিম দেশে। এটি ছিল মূলত কফি। এক সময় তুরস্কে কফির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। আর সেই পানীয়ই হয়ে ওঠে মার্কিন সেনাদের জন্য সঞ্জীবনী সুধা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রতিটি মার্কিন সেনার রেশনে দেওয়া হতো কফি। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে নিতেই টোটকা হিসেবে ব্যবহার করা হতো এই পানীয়।
কফি পানে যুদ্ধক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক শক্তি সঞ্চয় হতো। আর বাড়ত সজাগ দৃষ্টিও। এছাড়া এক ধাক্কায় বেড়ে যেত মনোবল। জানা যায়, শক ঠেকাতেও কফি ব্যবহার করতেন মেডিকরা। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের চাঙা রাখতে বিভিন্ন পানীয় বা ওষুধ ব্যবহার করা হতো। তবে সারারাত জেগে থাকার পরও ঝরঝরে করে ফেলতে কফির জুড়ি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বিপ্লবের সময়ই মার্কিন বাহিনীর মধ্যে কফি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রিটিশরা চায়ের ওপর করারোপের পর কফি পানকে দেশপ্রেম হিসেবে দেখা হতো।
গৃহযুদ্ধের সময় ইউনিয়ন সেনাদের বার্ষিক ৩৬ পাউন্ড কফি বরাদ্দ দেওয়া হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুদ্ধ দপ্তর কফি উৎপাদনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। এভাবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ মার্কিনিদের সকালের নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয় কফি পান। ১৯০০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বার্ষিক মাথাপ্রতি কফি পান দ্বিগুণ হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির প্রায় ১০ শতাংশই ছিল কফি বিন। বাড়তে থাকা চাহিদার জন্য মার্কিন সরকারকে হিমশিম খেতে হয়।
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপানিরা পার্ল হারবারে হামলা করে। এরপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কফির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। মার্কিন নৌবাহিনী হাওয়াইয়ের কফির অধিকাংশই কিনে নেয়। এমনকি ব্রুকলিন ও হাওয়াইয়ের কৌশলগত স্থানে নিজস্ব রোস্টিং প্লান্টও বানায় তারা। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কফি বিনের সরবরাহকারী দেশ ব্রাজিল ১৯৪২ সালের জুন মাসে তাদের সব জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবেই কফির ব্যবসাও যুক্তরাষ্ট্রে ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
মন্তব্য করুন