কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২১ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শপথ গ্রহণের পরপরই ১০ নির্বাহী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শপথের দিনই অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শপথের দিনই অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন, এবার দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিতে যাচ্ছেন।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ট্রাম্প একদিনে মাত্র একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন—ওবামাকেয়ার বাতিলের আদেশ। তবে এবার, তার দ্বিতীয় মেয়াদে শপথের দিনই অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

১. গণ অভিবাসন এবং অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো

ট্রাম্পের প্রথম দিনের এজেন্ডার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভিবাসন। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রথম দিনেই আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী তাড়ানোর প্রোগ্রাম চালু করব, যাতে অপরাধীরা বের হয়ে যায়। তবে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব তা নিয়ে অভিবাসন সমর্থকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

২. জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করতে চান। তিনি বলেছেন, অবশ্যই, আমি প্রথম দিনেই এই পদক্ষেপ নেব। এই পদক্ষেপটি আইনি এবং বাস্তবিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, কারণ এটি সংবিধানের ওপর প্রশ্ন তোলে। এ ছাড়া ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের সীমান্ত নীতির পরিবর্তন করে 'টাইটেল ৪২' নামক পাবলিক হেলথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অভিবাসীদের তাড়ানোর পরিকল্পনাও করেছেন।

৩. ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের ক্ষমা

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা করা কয়েকজনের ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম দিনেই বিষয়টি দেখব। তিনি এমনকি বলেন, প্রথম নয় মিনিটের মধ্যেই আমি হামলাকারীদের ক্ষমা করে দেব। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।

৪. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি পুতিন ও জেলেনস্কিকে জানি। তারা আমাকে সম্মান করে, কিন্তু বাইডেনকে তারা সম্মান করে না। ট্রাম্প মনে করেন, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হন, তবে তিনি দ্রুত এই যুদ্ধের সমাধান করতে পারবেন।

৫. শুল্ক আরোপ

ট্রাম্প তার শপথের দিন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মেক্সিকো এবং কানাডার মতো প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের বিরুদ্ধে। এই শুল্ক তাদের পণ্য আমদানির ওপর আরোপ করা হবে, যা কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে, কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৬. বাইডেনের ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল ম্যান্ডেট’ বাতিল

ট্রাম্প বাইডেনের ২০৩০ সালের মধ্যে মার্কিন বাজারে ৫০ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণকারী গাড়ি বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল ম্যান্ডেট’ বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথম দিনেই আমি এই ম্যান্ডেট বাতিল করব। তার মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী গ্যাসচালিত গাড়ি শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।

৭. তেলকূপ খনন বৃদ্ধি

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আরও তেলকূপ খনন করবেন। তার মতে, তেলের উৎপাদন বাড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খরচ কমাবে। তবে পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও তীব্র করতে পারে।

৮. নারীদের খেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ

ট্রাম্প নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম দিনেই আমি নারীদের খেলাধুলা থেকে পুরুষদের শতভাগ সরিয়ে দেব। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যারা মনে করেন এই নীতি বৈষম্যমূলক এবং ক্ষতিকর হতে পারে।

৯. জেন্ডার-অ্যাফার্মিং কেয়ার বন্ধ

ট্রাম্প জেন্ডার-অ্যাফার্মিং কেয়ার (যেমন ট্রান্সজেন্ডার চিকিৎসা) বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার মতে, বাইডেনের সরকার এই চিকিৎসার মাধ্যমে তরুণদের ক্ষতি করছে এবং তিনি প্রথম দিনেই এই নীতিমালা বাতিল করবেন।

১০. মেড-ইন-আমেরিকা গাড়ি শিল্প পুনরুজ্জীবিত

ট্রাম্প আমেরিকান গাড়ি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি ভোট মানে ভবিষ্যতের গাড়ি আমেরিকায় তৈরি হওয়া। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চান, যাতে দেশীয় উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম দিনেই নেওয়া এসব নির্বাহী আদেশ তার প্রেসিডেন্সির এক বিশাল অংশ হতে পারে।

যদিও এসব পদক্ষেপ অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে এবং বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে, তবে ট্রাম্পের এসব উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা / মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের নয়, রাষ্ট্রের : ডা. সায়েদুর

কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস ছালাম গ্রেপ্তার

জগন্নাথপুরে কাঁচামরিচের বাম্পার ফলন

ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

জামিনে বের হয়ে সাক্ষীসহ ৫ জনকে ‘কোপাল’ মামলার আসামি

সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

‘গোলাপ’ নিয়ে আসছেন নিরব 

রাজশাহীর অধিনায়ক পরিবর্তন

আবারও রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন পেরেজ

ব্যস্ত রমা

১০

১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস পেলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন

১১

টাকা দিয়েও কারাগারে থাকতে চান জাপানের বৃদ্ধরা

১২

পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার কে কোন পোশাক পেলেন? 

১৩

আটক সেই ৩ জাহাজ ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি

১৪

আস্তে আস্তে বাড়ছে কঙ্গনার ‘ইমার্জেন্সি’-এর প্রভাব

১৫

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না : খন্দকার মোশাররফ

১৬

দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশির সংখ্যা জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল ব্যবহারের অনুমতি পেল বিজিবি

১৮

১৪৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলায় গ্রেপ্তার আনিসুল

১৯

রাজধানীতে অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ

২০
X