মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সংবাদ সম্মেলন থেকে এক সাংবাদিককে বের করে দেওয়া হয়েছে। গাজা নিয়ে প্রশ্ন করায় তাকে বের করে দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া সাংবাদিকের নাম সাম হুসেইনি। তিনি অভিযোগ করেন, পরারষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং চলাকালে মিডিয়া টিমের সদস্যরা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনামূলক প্রশ্ন করা থেকে আটকাতে চেষ্টা করেছিলেন।
সাম বলেন, আমি বুঝতে পারিনি যে আমাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হবে। আমি সময়োপযোগী প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছিলাম। এ ধরনের কাজ আমি বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার করেছি।
মার্কিন কৌতুকাভিনেতা এবং লেখক কেটি হাল্পারের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে গাজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জেনেভা কনভেনশনগুলিকে স্বীকৃতির বিষয়টি কেন প্রত্যাখ্যান করছে যুক্তরাষ্ট্র। এটাই মার্কিন নীতি। মার্কিন নীতি জেনেভা কনভেনশনকে ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে স্বীকৃতি দেয় না। এটি সম্পূর্ণরূপে কলঙ্কজনক।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। সম্প্রতি সাতজন ইসরায়েলি সেনার বরাতে বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় তারা যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন, তা তাদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছে, তাদের বলা হয়েছিল নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে, যেগুলোর মধ্যে কোনো হুমকি ছিল না। তারা লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞেরও সাক্ষী ছিলেন।
‘সোলজারস ফর দ্য হোস্টেজেস’ নামক একটি গ্রুপ গঠন করেছে ইসরায়েলের সাবেক সেনারা, যারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তারা তেল আবিবে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি উদ্ধৃতি ‘অন্যায্য আইন অমান্য করাটা নৈতিক দায়িত্ব’ শেয়ার করা হয়। তাদের মতে, গাজা উপত্যকায় যে অন্যায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তাদের মানবিক দায়িত্ব।
ইসরায়েলি সেনাদের ওপর গাজার যুদ্ধের গভীর প্রভাব ফেলেছে। অসংখ্য সেনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এবং তাদের অনেকেই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত থেরাপি নিচ্ছেন। মানসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের এমন চরম পরিস্থিতি সেনাদের ঘুমের সমস্যা, দুঃস্বপ্ন এবং অপরাধবোধের সৃষ্টি করছে।
ইসরায়েলের সাবেক এক পদাতিক সেনা এপিকে বলেন, তিনি অপরাধবোধে ভুগছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রায় ১৫টি বাড়িঘর অযথা পুড়িয়ে দিতে দেখেছেন তিনি। সাবেক এই সেনা বলেন, ‘আমি দেশলাই জ্বালাইনি, তবে আমি বাড়ির সামনে পাহারা দিয়েছিলাম। আমি যুদ্ধাপরাধে শামিল হয়ে গেলাম।’
নাম প্রকাশ না করে ওই পদাতিক সেনা বলেন, ‘আমরা গাজায় যা করেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত।’
ইসরায়েলি সেনাদের এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং জাতিহত্যার অভিযোগ তুলেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। যদিও ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যথাসাধ্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
মন্তব্য করুন