মার্কিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিতর্কিত পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত। সম্প্রতি তিনি আবারও একাধিক বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের দখল নিতে প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
বিতর্কিত মন্তব্য
সম্প্রতি ট্রাম্প এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়া, পানামা খালের দখল নেওয়া এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার ইচ্ছা। পাশাপাশি, ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিরক্ষা চাঁদা বাড়ানোর দাবি এবং মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাম্পের ব্যাখ্যা
ফ্লোরিডার বিলাসবহুল রিসোর্ট মার আ লাগোয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের মতো অঞ্চলগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রয়োজনে সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহারেও আমি দ্বিধা করব না।
কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে অনেক সমর্থন ও সামরিক সহায়তা দেয়, কিন্তু এর বিনিময়ে কোনো লাভ পায় না। দুই দেশের সীমারেখা কৃত্রিম এবং এটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
ডেনমার্ক ও পানামার প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ডেনমার্ক ও পানামা। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট্টে ফ্রেদেরিকসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড কোনোভাবেই বিক্রি হবে না। পানামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাভিয়ের মার্তিনেজ-আচা বলেছেন, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ শুধু পানামার জনগণের হাতেই থাকবে।
কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়া
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কানাডা একটি শক্তিশালী দেশ। আমরা হুমকিতে পিছু হটব না। মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী মার্সেলো এবরার্দ জানান, ট্রাম্পের কথায় আমরা বিতর্কে যাব না। মেক্সিকো উপসাগরের নাম ৩০ বছর পরও অপরিবর্তিত থাকবে।
বিশ্লেষকদের মত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন মিত্রদের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে ন্যাটো জোটের চাঁদা বাড়ানোর দাবি এবং গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
নির্বাচনের পর এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলন। তার এই মন্তব্যগুলো নির্বাচনের প্রচারণার সময়ের বক্তব্যেরই প্রতিফলন। তবে এসব মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প তার বক্তব্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমর্থন বাড়াতে এবং নিজেকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে চান। এছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এমন মন্তব্য তাকে তার সমর্থকদের আরও একত্রিত করতে সহায়তা করে।
তবে, সমালোচকরা বলছেন, তার বক্তব্য অনেক সময় বিভাজন তৈরি করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
মন্তব্য করুন