মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যার রাজনৈতিক জীবন বরাবরই আইন এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে এসেছে, শেষ পর্যন্ত পুত্র স্নেহের কাছে হার মানলেন।
পিতা বাইডেন তার একমাত্র জীবিত সন্তান হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যদিও এর আগেও তিনি বারবার জানিয়েছিলেন, পুত্রের বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না।
রোববার (০১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাইডেন বলেন, তার ছেলেকে ‘লক্ষ্যবস্তু’ করা হয়েছে এবং এই মামলাগুলোকে ‘ন্যায়বিচারের অপব্যবহার’ বলে অভিহিত করেছেন। খবর আলজাজিরা।
বাইডেন জানান, তিনি এতদিন ধরে এই বিশ্বাসে ছিলেন যে বিচার ব্যবস্থা সঠিক পথে চলবে, তবে রাজনীতি এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে এবং ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, তিনি আর দেরি না করে পুত্রকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ বছরের শুরুতে, হান্টার বাইডেন মাদক সেবন ও অস্ত্রের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং কর ফাঁকির মামলায়ও তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। এসবের পরেও তিনি প্রায়শ্চিত্তের পথ অনুসরণ করতে থাকেন এবং বাইডেন পরিবার এই কঠিন সময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে।
পিতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই সিদ্ধান্তের পেছনে গভীর পারিবারিক সম্পর্কের প্রভাব রয়েছে। বাইডেন বলেন, আমি আশা করি আমেরিকানরা বুঝতে পারবেন কেন একজন পিতা ও একজন প্রেসিডেন্ট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তার মতে, বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ না করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা তার পুত্রের উদ্দেশ্যমূলক বিচার এবং রাজনৈতিক চাপের মাঝে তিনি তার সিদ্ধান্তে টিকে থাকতে পারেনি।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে, হান্টার বাইডেন নথি জালিয়াতি এবং কর ফাঁকির ৯টি মামলায় দোষ স্বীকার করেন এবং তার বিরুদ্ধে বন্দুকসংক্রান্ত একটি আলাদা মামলা ছিল। যেখানে তিনি মাদকাসক্তি গোপন করে আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছিলেন। যদিও এইসব অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তার শাস্তি অপেক্ষাকৃত হালকা হতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হয়েছিল।
এদিকে একমাত্র পুত্র হান্টারের দুর্দশা এবং তার পুনর্বাসনের চেষ্টা। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিবারে এক গভীর অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। বাইডেন, যিনি তার পুত্রকে কখনোই ক্ষমা করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এখন বাইডেন বুঝতে পারছেন, পিতৃত্বের চেয়েও শক্তিশালী সম্পর্ক হয়তো নেই।
পুত্রকে ক্ষমা করার এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি বিরল ক্ষমা প্রদর্শনের মুহূর্ত হিসেবে স্থান পাবে। এর আগে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার সৎভাইকে কোকেন মামলায় ক্ষমা করেছিলেন।
এ ছাড়া নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার আগের মেয়াদে কর ফাঁকির মামলায় মেয়ে ইভাঙ্কার শ্বশুর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চার্লস কুশনারকে ক্ষমা করেন। নতুন মেয়াদে তাকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেন ট্রাম্প। তবে জো বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত অনেক বেশি পারিবারিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণযোগ্য।
মন্তব্য করুন