বিশ্ববাজারে ডলারের প্রভাব কমাতে নতুন কোনো মুদ্রা চালুর আলাপ দীর্ঘদিনের। আর এটাকে বাস্তবে করে দেখাতে বদ্ধপরিকর বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকস। ব্রিকস জোটকে বলা হয় পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববাজার ব্যবস্থার সবচেয় বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে তারা নতুন কোনো মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেন শুরু করলে তা যেমন ডলারের ওপরে তেমনি বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমাদের প্রভাবের ওপরে হবে সবচেয়ে বড় আঘাত।
পশ্চিমা দেশগুলো খুব ভালোভাবেই এই সম্ভাব্য আঘাতের গভীরতা বোঝে। তাই তারা কোনোভাবেই চায় না বিশ্ববাজারে ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো মুদ্রা চালু হোক। এমন কি পশ্চিমা আধিপত্যবাদের কেন্দ্রে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এখানে কোনো ভুল করতে চান না।
তাই ক্ষমতাগ্রহণের আগেই সরব হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোকে নতুন কোনো মুদ্রা চালু করতে নিষেধ করেছেন। বিশ্ববাণিজ্যে মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে বা এই মুদ্রাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো মুদ্রায় বাণিজ্য চলতে পারে, এমন কোনো মুদ্রাকেও সমর্থন দিতে নিষেধ করেছেন তিনি।
ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো নতুন কোনো মুদ্রা আনতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। শনিবার (৩০ নভেম্বর) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে তিনি এ হুমকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এসব দেশের কাছ থেকে আমরা একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে, তারা নতুন একটি ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না বা তারা এমন আর কোনো মুদ্রাকে সমর্থন দেবে না, যা শক্তিমান মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপিত করবে। এই প্রতিশ্রুতি না দেওয়া হলে তাদের ১০০ শতাংশ শুল্কের মোকাবিলা করতে হবে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও লেখেন, ব্রিকস দেশগুলো তার কথা না মানলে তাদের ‘চমৎকার অর্থনীতির যুক্তরাষ্ট্রে তাদের (পণ্য) বিক্রিকে বিদায় বলার জন্য’ প্রত্যাশা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘শুষে নেওয়ার জন্য তারা আরেকটি দেশকে খুঁজে দেখতে পারে।’
গত ৫ নভেম্বরের ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন এই রিপাবলিকান প্রার্থী। এরই মধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন যে, শিল্প উৎপাদনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে তিনি যে কোনো আমদানি পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন। আর চীনের পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের হার হবে অন্তত ৬০।
চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে দেশগুলোর স্থানীয় মুদ্রাকে শক্তিশালী করার বিষয়েও আলোচনা হয়। ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো হলো- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা, যার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মিসর, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মন্তব্য করুন