অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটা নারীবিদ্বেষী বলেই পরিচিত রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটিতে নারীদের গর্ভপাত, সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বেশ রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিয়েছেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যেই নতুন করে বিতর্ক উঠেছে দেশটির সামরিক বাহিনীতে নারী সেনাদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা নিয়ে।
এমন বিতর্কের মূলে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে পেট হেগসেথের মনোনয়ন। যদি মার্কিন সিনেটে তার মনোনয়ন অনুমোদন করা হয় তবে বেশ বড় আশঙ্কায় পড়তে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনীর নারী সদস্যরা।
বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রিপাবলিক সমর্থক ফক্স নিউজের ভাষ্যকার ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হেগসেথ তার নিজের বই এবং বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যুদ্ধ পরিচালনা বিভাগে নারী ও পুরুষের একই সঙ্গে কাজ করা উচিত নয়। ফলে রক্ষণশীল এই কর্মকর্তা যদি প্রতিরক্ষা বিভাগের কাজ শুরু করেন তবে প্রায় এক দশক ধরে সকল সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা চাকরিগুলোতে নারীদের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে এক পডকাস্টে হেগসেথ জানান, তিনি পরিষ্কারভাবে সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে নারীদের দেখতে চান না। এটা সেনাবাহিনীকে আরও কার্যকর এবং প্রাণঘাতী হিসেবে গড়ে তোলে না, বরং নারী সেনাদের অংশগ্রহণ যুদ্ধ করাটা অনেক কঠিন করে তোলে। তবে নারীদের সামরিক বাহিনী থেকে একেবারে বাদ দেওয়ার কথা বলেননি মনোনীত এই মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। জানান, সামরিক বাহিনীতে নারীদের জন্য জায়গা রয়েছে তবে সেটা বিশেষ অভিযান, গোলন্দাজ, পদাতিক ও সাঁজোয়া ইউনিট বাদে।
হেগসেথের এমন মন্তব্যের পরই সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। মার্কিন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন লরি ম্যানিং প্রশ্ন তোলে, নারীদের যুদ্ধ বিভাগ থেকে বাদ দেওয়া হলে তাদের পরিবর্তে পুরুষদের নেওয়া হবে কি না। এ সময় তিনি জানান, সেনাবাহিনী বর্তমানে পুরুষ সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে বেশ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
কয়েক বছর ধরেই মার্কিন সামরিক বাহিনী নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আরও ভালো বেতন ও সুবিধা দেওয়ায় তরুণরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইছে না। এ ছাড়াও অনেক তরুণ সেনাবাহিনীর শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও শিক্ষাগত মানদণ্ড পূরণ করতে পারছেন না।
অবসরপ্রাপ্ত নারী সেনারা জানান, সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ থেকে নারী সেনাদরে সরিয়ে দেওয়া হলে বাহিনীর মান দ্রুত অবনতি হতে থাকবে। শূন্যপদ পূরণে এমন পুরুষদের নিয়োগ করতে হবে যারা হাইস্কুল পাস করতে পারেনি অথবা তাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস রয়েছে। এমনকি শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরও নিয়োগ দিতে হবে।
মন্তব্য করুন