এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় অবৈধ অভিবাসন নীতি নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী এখন ঘোর দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। পরাজিত প্রার্থী কমলা হ্যারিস সরাসরি হুমকি না দিলেও সীমান্ত সুরক্ষা আইনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো যুক্তরাষ্ট্রে যদি অভিবাসী না থাকে তাহলে কী হবে?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিবাসী না থাকলে আমেরিকার জনসংখ্যা অনেক কম হবে। দেখা গেছে, ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চার কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন যা মোট মার্কিন জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩০-এর দশকের পর সর্বনিম্ন হারে জনসংখ্যা বেড়েছে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে। যার মানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবীণদের সংখ্যা সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষম অল্প বয়সী মানুষ কমে যাচ্ছে।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস বলছে, ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা জন্মকে ছাপিয়ে যাবে। তখন অভিবাসনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক হাসান জানিয়েছেন, অভিবাসীদের অনুপস্থিতির বড় প্রভাব পড়বে মার্কিন অর্থনীতিতে। যদি অভিবাসীদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে মাথাপিছু জিডিপি পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কমে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সেক্টরে কর্মরত তিন কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশই অভিবাসী। ‘ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিসটিক্স’- এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তিতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে অভিবাসীদের হার আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের চাইতে চেয়ে বেশি। অর্থ ব্যবস্থায় ভূমিকা পালন করে এমন সেক্টর যেমন কৃষি- সম্পূর্ণরূপে অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল। মার্কিন জাতীয় কৃষি শ্রমিক জরিপ অনুযায়ী দেশটির ৭০ শতাংশ শ্রমিক অভিবাসী।
আমেরিকান ইমিগ্র্যান্ট কাউন্সিলের গবেষণা নির্দেশক নান ব্যু জানান, অভিবাসীদের সরিয়ে দেয়ার অর্থ হলো কৃষিকাজ করা, ফল এবং শাক সবজি তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাবেন না ক্ষেতের মালিকরা। অন্যদিকে, অভিবাসন বিরোধীদের যুক্তি হলো, অভিবাসী শ্রমিকরা কম মজুরিতে কাজ করতে প্রস্তুত এবং যার ফলে মার্কিন নাগরিকরাও কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পর্যবেক্ষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী নাগরিকদের বেতনের উপর অভিবাসনের গড় প্রভাব প্রায় শূন্যের সমান।
রাজস্বের দিক থেকে ৫০০টি বৃহত্তম মার্কিন কোম্পানির বার্ষিক তালিকার প্রায় ৪৫ শতাংশ সংস্থাই অভিবাসী বা তাদের সন্তানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। একই সময়ে, ১০০ কোটি ডলার বা তার বেশি মূল্যের মার্কিন স্টার্ট-আপগুলোর ৫৫ শতাংশই প্রতিষ্ঠা করেছে অভিবাসীরা। অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১০ লক্ষেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চার হাজার কোটি ডলারের অবদান রেখেছে।
মন্তব্য করুন