বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় উঠে এসেছে বিভিন্ন আলোচিত ইস্যু। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার গুঞ্জন, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনার কারণে এবারের প্রচারণা আরও বেশি আলোচিত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব ইস্যু বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট যেমন অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক বিভাজন যেমন উঠে এসেছে প্রচারণায়, তেমনই প্রাধান্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক ইস্যু। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের গাজা-ইসরায়েল সংঘাত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন নীতির মতো ইস্যুগুলো এবারের নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
দেশটির ডানপন্থি পরিকল্পনা ‘প্রজেক্ট-২০২৫’ নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিভিন্ন উগ্র ডানপন্থি নীতি বাস্তবায়ন। কমলা হ্যারিস একে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্পের ওপর এই পরিকল্পনার সমর্থনের অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্প অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ ছাড়া গর্ভপাত অধিকার নিয়ে প্রচারণায় দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা করে বলেন, তারা গর্ভধারণের শেষ পর্যায়েও গর্ভপাতের অনুমোদন দিতে চায়। অন্যদিকে, হ্যারিস পাল্টা অভিযোগ করেন, ট্রাম্পের সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির নিয়োগের মাধ্যমে গর্ভপাতের জাতীয় অধিকার বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় মধ্যপ্রাচ্যের গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে দুই প্রার্থীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। হ্যারিস ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান’কে শান্তির একমাত্র পথ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না।
নির্বাচনী প্রচারণায় ইউক্রেন সংকট নিয়েও দুই প্রার্থী বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতেন। অন্যদিকে, হ্যারিস ঘোষণা করেছেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া হবে।
এছাড়াও হ্যারিস নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি ও আবাসন ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে রিপাবলিকানরা এটিকে ব্যয়বহুল বলে সমালোচনা করছে।
ট্রাম্প হ্যারিসকে ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস-প্রেসিডেন্ট’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করেছেন এবং দাবি করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে বৈশ্বিক নিরাপত্তা পর্যন্ত নানা ইস্যুতে ভরপুর এবারের নির্বাচনী প্রচারণা বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
মন্তব্য করুন