কোনো দেশের নির্বাচনে প্রচারণা ও অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে খরচের পরিমাণ জানলে অনেকের চোখ কপালে উঠার দশা হয়। স্বভাবতই এমন প্রশ্ন আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ পরাশক্তির দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় যা খরচ করা হয়; তা হয়তো অনেক দেশের মোট বাজেটের সমান। কিন্তু কোথা থেকে আসে বিপুল এ অর্থের জোগান আর কারাই বা এসব অর্থ দেয়।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনী প্রচারণার অর্থ জোগাড় করতে প্রার্থীরা বেশকিছু বিকল্প বেছে নেন। প্রার্থীরা তাদের নিজস্ব অর্থ দিয়ে প্রচারণা চালাতে পারেন। অথবা, ব্যক্তিগত দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। তহবিলের আরেকটি উৎস রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি গ্রুপ থেকে আসে, যা প্যাক বা সুপারপ্যাক নামে বেশি পরিচিত। এমনকি সরকারি তহবিল থেকেও অর্থ পেতে পারেন তারা। তবে এক্ষেত্রে ব্যয়ের হিসাবের কঠোর সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে হয়।
মার্কিন নির্বাচনে অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান ওপেনসিক্রেটসের তথ্য অনুসারে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী তহবিলে এখন পর্যন্ত সোয়া এক বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়েছে। হ্যারিসের মোট সংগ্রহের ৫৬ শতাংশই এসেছে বড় বড় দান থেকে। বাকি ৪৪ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে ২০০ ডলারের নিচে ব্যক্তিগত পর্যায়ের ছোট ছোট অবদানের মাধ্যমে। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোট তহবিল দাঁড়িয়েছে ৯৪০ মিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্পের তহবিলের ৬৮ শতাংশেরও বেশি অবদান এসেছে অতিধনীদের সমর্থন থেকে। হ্যারিসের চেয়ে এই পরিমাণ প্রায় ৬ শতাংশ কম।
প্রার্থীদের তহবিলে কারা দান করতে পারবেন, কারা পারবেন না, এ নিয়ে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের কঠোর নিয়ম রয়েছে। কেবল মার্কিন নাগরিক বা গ্রিনকার্ডধারীরাই নির্বাচনী তহবিলে দান করতে পারেন। এমনকি দানের সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সরকারি ঠিকাদার, করপোরেশন, জাতীয় ব্যাংক, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং অলাভজনক সংস্থাগুলো ফেডারেল নির্বাচনী তহবিলে সরাসরি অবদান রাখতে পারে না।
পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বা প্যাক দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থার একটি অংশ। এই লবিং গ্রুপগুলো প্রার্থীদের পক্ষে অর্থ ও ভোট সংগ্রহে কাজ করে। পূর্বে তাদের অনুদান সীমিত এবং দাতাদের তালিকা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট করপোরেশন এবং ইউনিয়নগুলোর ক্ষেত্রে প্রচারণায় অর্থ প্রদানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে এই গোষ্ঠীগুলো ব্যক্তি, ইউনিয়ন বা করপোরেশন থেকে সীমাহীন সংগ্রহ করতে পারে এবং অনুদান দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যদিও প্যাক এবং সুপারপ্যাকগুলো সরাসরি কোনো প্রার্থীকে অনুদান দিতে পারে না এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে হয়।
মন্তব্য করুন