বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসন্ন। সাম্প্রতিক ভূরাজনীতি, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি ও লেবাননের যুদ্ধের উত্তপ্ত সময়ে এই নির্বাচন বাড়তি গুরুত্ব রাখছে সবার কাছেই। এমনকি এসব যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাব রাখছে ভোটারদের ওপরও। বিশেষ করে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে প্রার্থীদের মনোভাব প্রভাব ফেলবে মার্কিন মুসলিম ও ইহুদি ভোটারদের ব্যালট পেপারে।
ট্রাম্প ও কমলা উভয়েই মিশিগান ও পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে অতিরিক্ত নজর দিচ্ছেন। মিশিগানে প্রায় দুই লাখ আরব ও মুসলিম ভোটার, গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের অনেকেই কমলার পক্ষে ভোট দেবেন না বলে ভাবা হচ্ছে। অঙ্গরাজ্যটিতে রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইহুদি ভোটার রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক হিসেবে তালিকাভুক্ত। গত তিনটি নির্বাচনে সারা দেশে ইহুদিদের প্রায় ৭০ শতাংশ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এবারও কি সেই অনুপাতে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নই উঠছে বিভিন্ন মহলে।
বাইডেন ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিলেও আরব ও মুসলিম ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে কমলা গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন, ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমর্থন করেছেন। অনেক ইহুদি আমেরিকানের চোখে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি কথা বলা বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। সে জন্য ইহুদিদের ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটদের এই দ্বিধা।
ইহুদি-আমেরিকানদের মতামতের যে নতুন জরিপ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৭১ শতাংশ ভোটার কমলা ও ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। মাত্র ২৬ শতাংশ ইহুদি বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। জুইশ ডেমোক্রেটিক কমিটি অব আমেরিকার নেয়া এই জরিপে প্রধানত ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোর ইহুদিদের মতামত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান জুইশ কোয়ালিশনের পক্ষে যে জরিপ করা হয়েছে, তাতে ইহুদি ভোটারদের অর্ধেকই জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্পের সমর্থক।
পেনসিলভানিয়াতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরব-মুসলিম ও ইহুদি নাগরিকের বসবাস। ট্রাম্প ও কমলা উভয়েই এই দুই গ্রুপের ভোট পেতে মরিয়া। মুসলিমদের ব্যাপারে কমলার হিসাব, ট্রাম্প খোলামেলাভাবে ইসরায়েলপন্থি। তিনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে এনেছেন ও ওয়াশিংটনে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু সংস্থার জন্য আর্থিক অনুদানও তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
ইহুদিদের ব্যাপারে অবশ্য কমলার প্রচার শিবির অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কমলার স্বামী ডাগ এমহফ একজন ইহুদি, যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি-বিদ্বেষ ঠেকাতে তিনি একটি জনপ্রিয় রণকৌশল প্রণয়ন করেছেন। নিজের স্বামীকে ইহুদি ভোট শিকারে কমলা কাজে লাগাচ্ছেন।
অন্যদিকে, অবশ্য ইহুদি ভোটের ব্যাপারে কমলার পক্ষে সেরা প্রচারক ট্রাম্প নিজেই। তাকে অধিকাংশ ইহুদি চেনেন ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ হিসেবে। সম্প্রতি এক ইহুদি সম্মেলনে অতিথি বক্তা হিসেবে ট্রাম্প বলেন, যদি কেউ তাকে ভোট না দিয়ে কমলাকে ভোট দেন, তাহলে তাদের মাথা পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
মন্তব্য করুন