কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গুলশানে টিউলিপের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের খোঁজ

টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি : সংগৃহীত
টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার গুলশানে টিউলিপ সিদ্দিকের একটি বিলাসবহুল ফ্লাটের খোঁজ পাওয়া গেছে। দশতলা ভবনের ওই ফ্লাটটি টিউলিপের নামে তালিকাভুক্ত এবং সম্পত্তিটির নামকরণ করা তার পরিবারের নামে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, তারা সে দেশের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঢাকার এ ফ্ল্যাটের খোঁজ পেয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। টিউলিপ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য এবং সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

টিউলিপের নামে এর আগেও ঢাকার অদূরে গাজীপুরে বাগানবাড়িসহ অন্যান্য জায়গায় আরও কয়েকটি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কর্মকর্তারা। এবার ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে আরও একটি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল। ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল। তখন তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

প্রায় এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি এখনো সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও দরকার নেই।

সিটি মিনিস্টার পদ থেকে পদত্যাগের আগে লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের বাড়ি ও ফ্লাটসহ বেশ কয়েকটি সম্পত্তির কথা প্রকাশ্যে আসে। এর মধ্যে একটি ফ্লাট তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন তার খালা শেখ হাসিনাার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী। তবে অভিযোগ ওঠে এই ফ্লাট প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে কেনা। টিউলিপ মূলত দূর্নীতির অর্থের ভাগ হিসেবে এটি পেয়েছেন। উপহারের বিষয়টি ছিল সাজানো।

বাংলাদেশে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে, যা তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। লন্ডনে টিউলিপের মালিকানাধীন ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের ফ্ল্যাট সেই দূর্নীতির অর্থে কেনা হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে তদন্তে।

শেখ হাসিনা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত ৫ আগস্ট বিতাড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। তার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

দুদক ধারণা করছে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থের মাধ্যমে লন্ডনে বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনা হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট ছাড়াও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের উত্তর লন্ডনে সাড়ে ৬ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাটসহ ১৫ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডের আরেকটি সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অর্থ পাচারের অভিযোগ: তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অবৈধ অর্থ স্থানান্তর করে লন্ডনের এই সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘গোপন তদন্তে অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমরা এর একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি ও আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগে জড়িত বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থ পাচার ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।’

এদিকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকায় এক গোপন বৈঠকের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এ তথ্য দেয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল।

টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি প্রমাণ হলে তার ১০ বছরের জেল হতে পারে। কারণ, ব্রিটেনের ব্রাইবারি অ্যাক্ট ২০১০ অনুযায়ী, কেউ বিদেশে ঘুষ গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্রিটেনে মামলা এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেসবুকে ‘বিদায় বাংলাদেশ’ লিখে পলাতক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে ২ বিমানের সংঘর্ষ

ট্রাকে আসছিল ৯৮ কেজি গাঁজা, গ্রেপ্তার ২ 

চাঁদা দাবির অভিযোগে জামায়াত কর্মী বহিষ্কার

গোপালগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর শোভাযাত্রা

সাবেক এমপি মজিদ খান কারাগারে

সরকারের উদ্দেশে এবি পার্টি / জনগণ চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হওয়ার আগেই দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিন

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি: বাংলাদেশের ম্যাচে কারা আম্পায়ার?

অপারেশন ডেভিল হান্টে যশোরে গ্রেপ্তার ২৪

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতাকে যেভাবে সাহায্য করেছিল র‍্যাব হেডকোয়ার্টার

১০

অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ১৩

১১

নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই শিশুর

১২

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসারায়েলে তাণ্ডব, বাস্তুচ্যুত ৩৫ হাজার

১৩

আ.লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে মারধর, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক

১৪

এবার দুই মুসলিম দেশকে বিপদে ফেলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

১৫

হার্ট অ্যাটাক করেও যুবক বললেন, এখনই অফিস যেতে হবে  

১৬

ম্যান সিটি বনাম রিয়াল মাদ্রিদ: নতুন ‘এল ক্লাসিকো’?

১৭

কোনো অপরাধীকে রাজপথে দেখতে চাই না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

থানার সামনে টিকটক ভিডিও বানানো সেই আ.লীগ নেত্রী আটক

১৯

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে মার্কিন সহায়তা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

২০
X