যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি ও সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে নতুন করে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এ চাপ তৈরি হয়েছে।
আর্থিক দুর্নীতির এক মামলায় বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনাসহ পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী ব্যাপক চাপে আছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন প্রশ্ন- কেন টিউলিপ এখনো পদে রয়েছেন?
এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে টিউলিপের। এই সুসম্পর্কের কারণেই টিউলিপ এখনো পদে রয়েছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী তার মিত্রদের ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নির্মমতা দেখিয়েছেন, তবুও যখনই তিনি পেরেছেন তাদের রক্ষা করেছেন এবং তাদের সরকারে ধরে রেখেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডন পার্টির মধ্যে বেশ প্রভাবশালী একজন খেলোয়াড়। তিনি কেয়ার স্টারমারের নির্বাচনী এলাকার প্রতিবেশী। দলের নেতৃত্ব নিয়ে যখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল তখন খুব শুরুতেই স্টারমারকে সমর্থন করেছিলেন টিউলিপ। আরেকটি দিক হলো, আওয়ামী লীগ লেবার পার্টির অন্যতম সহযোগী একটি দল এবং যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। এজন্য টিউলিপ এবং তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর।
টিউলিপ এখনো পদে থাকার আরেকটি কারণ হলো, বিরোধীদল স্টারমারের জন্য তার বন্ধু এবং মিত্রকে সরকারে ধরে রাখার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত খুব একটা চাপ সৃষ্টি করেনি। বিরোধীদলের প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ শনিবার রাতে টিউলিপকে বরখাস্ত করার জন্য কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে টিউলিপের বিষয়ে লেবার পার্টির চুপ থাকা এখন কঠিন হয়ে গেল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদল এবং ছায়া ট্রেজারি কর্তৃপক্ষ উভয়ই টিউলিপের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে দেরি করেছে। তারা প্রথমে গল্পটি বুঝতে পারেনি। তবে এখন যেহেতু প্রধান বিরোধীদলটি গল্পটি বুঝতে পেরেছে, তাই হতে পারে ট্রেজারি মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের দিন শেষ।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। দীর্ঘসময় ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং লেবার পার্টির রাজনীতি করেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তারও।
অভিযোগ উঠেছে, খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিনামূল্যে সম্পত্তি গ্রহণ করেছেন টিউলিপ। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ করে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পেয়েছেন তিনি।
এ ছাড়াও বাংলাদেশে অবকাঠামোগত ব্যয় থেকে শেখ হাসিনার পরিবারের ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে টিউলিপের নাম এসেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার এসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর চাপের মুখে পড়েছেন টিউলিপ। অনেকেই মনে করছেন যুক্তরাজ্যে টিউলিপের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হয়ত এখানেই শেষ।
মন্তব্য করুন