ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগের নেতা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক নৈশভোজে হাসিমুখে কথা বলতে।
গত ডিসেম্বর মাসে গ্লাসগোর ক্রাউন প্লাজা হোটেলে লেবার পার্টি আয়োজিত একটি অভিজাত নৈশভোজে আনোয়ারুজ্জামান অংশ নেন। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আনোয়ারুজ্জামান বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাসহ আন্দোলন দমনে সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে স্টারমারের সমালোচনা করে জানায়, অর্থ আত্মসাৎ এবং আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার পলাতক এই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটির সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্ক দৃঢ় করতে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
গত বছরে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। এমনকি লেবার পার্টির একজন প্রার্থীকে নির্বাচনী অনুদানও দিয়েছিলেন আওয়ামীপন্থি এক ব্যক্তি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এই আন্দোলনে শত শত মানুষ নিহত হন। অভিযোগ ওঠে, সরকার আন্দোলনকারীদের দমন করতে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। আনোয়ারুজ্জামানের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার পরিবারকে কেন্দ্র করে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সর্বশেষ যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ ভোটারদের সমর্থন পেতে লেবার পার্টি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৬,০০০ বাংলাদেশি ভোটার রয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাব আগের মতো নেই। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফ হক বলেন, লেবার পার্টি ভুলভাবে ধরে নিয়েছে যে আওয়ামী লীগ এখনো বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রভাবশালী। বাস্তবে এটি অনেকটাই কমে গেছে।
লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা লেবার পার্টির প্রচারণায় ভূমিকা রেখে আসছে। তবে এ সংগঠনকে আওয়ামী লীগপন্থি বলে মনে করা হয়। এ বিষয়ে লেবার পার্টি বলছে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। এটি রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তবে সমালোচকরা মনে করছেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে লেবার পার্টির নতুন কৌশল গ্রহণের সময় এসেছে। আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে স্টারমারের এই সাক্ষাৎ যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মন্তব্য করুন