যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ব্যক্তিগত বাসভবন কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নীতিকে পাশ কাটিয়ে উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়ায় এ কাণ্ড করেছেন তারা। সুনাকের এই বাসভবনটি ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ইয়র্কশায়ারে অবস্থিত।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিসের যুক্তরাজ্য শাখা গ্রিনপিস ইউকের কর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটেও এই সংস্থার কর্মীদের নেতৃত্বে প্রতিবাদী সমাবেশ হয়েছে।
আরও পড়ুন : অস্ত্র ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠছে ইউরোপ, খুঁজছে শ্রমিক
বৃহস্পতিবারের কর্মসূচির বিভিন্ন ছবি গ্রিনপিস ইউকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইয়র্কশায়ারে কালো কাপড়ে ঢাকা সুনাকের বাসভবনের ছাদের রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রিনপিস ইউকের চারজন কর্মী, আর নিচের লনে দুজন কর্মী হাতে একটি কালো কাপড়ের ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ব্যানারে লেখা, ‘ঋষি সুনাক, কোনটি গুরুত্বপূর্ণ- তেলের মুনাফা নাকি আমাদের ভবিষ্যৎ?’
স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে গ্রিনপিস ইউকের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয় এই ছবি। তারপরও অন্তত ২ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেছেন প্রতিবাদকারীরা। পরে ইয়র্কশায়ার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন : ট্রুডো দম্পতির ১৮ বছরের নানা ঘটনাপ্রবাহ
পশ্চিমা অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নীতি গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল। তাদের এই আন্দোলনের জেরে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেটি হলো, এখন থেকে প্রতি বছরই পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য কার্বন বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে। কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর জ্বালানি পণ্য তেল, গ্যাস ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। রাশিয়ার জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম। জ্বালানি পণ্যের এই মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে যুক্তরাজ্যের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপর।
ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন সরকার জনসাধারণের এই ভোগান্তি দূর করতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো-সংক্রান্ত পূর্বের নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত বেশ স্পষ্টভাবেই দিয়েছে। সোমবার এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর সাগরের যুক্তরাজ্য উপকূলের গভীর ও অগভীর বিভিন্ন এলাকায় তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য শতাধিক লাইসেন্স ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কয়লা অনুসন্ধানের লাইসেন্সও ইস্যু করবে সরকার।
ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে গ্রিনপিস ইউকেসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। গ্রিনপিস ইউকের একজন নেতৃস্থানীয় সংগঠক রয়টার্সকে বলেন, আমাদের দাবি একটাই। আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে একজন জলবায়ুবান্ধব নেতা হিসেবে দেখতে চাই। জলবায়ু ধ্বংসকারী হিসেবে নয়।
মন্তব্য করুন