যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে গণনার কাজ চলছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যার আগেই ফলাফল প্রকাশের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে বুথফেরত জরিপ প্রকাশ করেছে পোলিং কোম্পানি ইপসোস। খবর আলজাজিরার।
ওই জরিপ অনুযায়ী, কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের অবসান অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, বিরোধী দল লেবার পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে আসীন হওয়ার পথে।
জরিপে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ৬৫০টি নির্বাচনী আসনের সব কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলে একটানা রাত ১০টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা)। ভোটপরবর্তী হিসাবে লেবার পার্টি ৪১০টি আসনে ভূমিধস জয় পেতে পারে। তার মানে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন কিয়ার স্টারমার। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি ১৩১টি আসনে জয় পেতে পারে। তৃতীয় অবস্থানে থাকতে পারে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তারা পাবে ৬১টি আসন। স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্য দলগুলো বাকি আসনে জয় পেতে পারে।
পরাজয় অনেকটা মেনেই নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তার দল। সুনাকের আসন ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। ঋষি সুনাকেরও কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে না। তবে তিনি ভোটারদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। এক্স পোস্টে তিনি সবাইকে কঠিন সময়ে পাশে থাকার আহ্বান জানান। এদিকে কিয়ার স্টারমার ও তার দলের নেতাকর্মীরা খোশ মেজাজে আছেন। তারা জয় উদ্যাপনের জন্য দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচন-পূর্ববর্তী সব জরিপেও লেবার পার্টির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। মঙ্গলবার জরিপ কোম্পানি সার্ভেশন জানায় কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৪৮৪ আসন পাবে। এর আগে ১৯৯৭ সালে সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ৪১৮টি আসনে জয়ী হয়ে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছিল। কিন্তু এবার দলটি ওই ফলকেও ছাড়িয়ে অনেক দূর যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি) মাত্র ৬৪টি আসন পেতে পারে বলে অনুমান প্রকাশ করা হয়েছে। এটি হতে পারে ১৮৩৪ সালে রক্ষণশীল এ দলটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ ফল।
আর বুধবার রাতে বাজার গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ইউ গভের প্রকাশ করা সম্ভাব্য ফলে জানানো হয়, লেবার পার্টি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল থেকে ২১২টি আসন বেশি পেতে পারে। এমনটি হলে দলটি নতুন ইতিহাস গড়বে। এরকম অবস্থায় একপ্রকার পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে টানা ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দল কনজারভেটিভ পার্টি। কনজারভেটিভ মন্ত্রী মেল স্ট্রাইড বিবিসিকে বলেন, ‘আমি পুরোপুরি মেনে নিচ্ছি এই মুহূর্তে জরিপে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে নির্বাচনে লেবার পার্টি বৃহত্তম জয় দেখতে যাচ্ছে, বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠতা যা এই দেশ এর আগে দেখেনি।’ স্ট্রাইডের মন্তব্যের বিষয়ে সুনাকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি দ্বিমত না করে আইটিভিকে বলেন, ‘আমি প্রতিটি ভোটের জন্য কঠিন লড়াই করছি।’
ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময় থেকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে গত ২২ মে আকস্মিক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ২০১০ সাল থেকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। উল্লিখিত সমস্যার কারণে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি জনগণের হতাশা এখন দৃশ্যমান।
মন্তব্য করুন