যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় দেড় মাসের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে দেশজুড়ে বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে ।
নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিসহ ছোট বড় অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন ভোটারা । এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনায় কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মকর্তা।
এবার জাতীয় নিবার্চনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আইডি সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হচ্ছে ভোটারদের। হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ এই নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নের কাছাকাছি।
এদিকে দিনের পর দিন ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন নিয়ে নানা নিয়মের বেড়াজালে অভিবাসীদের জীবনের আলো জ্বলছে আর নিভছে। নির্বাচনে দেশের সামগ্রিক হাল চালের সঙ্গে অভিবাসন ইস্যু প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছে । ভোটার ও দলের নেতাদের আলোচনায় ঘুরে ফিরে সামনে আসছে এই ইস্যুটিই ।
তবে ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে সবপক্ষের মন জয় করতে খুব কৌশলে এগুচ্ছে লেবার পার্টি বললেন ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশী আলোচনা এনএইচএস । এনএইচএসকে গুরুত্ব দিয়ে দলগুলো ভোটারদের মন জয় করার চেষ্ঠা করছেন । কারণ হাজার হাজার রোগী এনএইচএস চিকিৎসার তালিকায় অপেক্ষায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের ।
কমিউনিটি নেতা নবাব উদ্দিন বলেন, পঙ্গু অর্থনীতিকে বাচাঁতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের গুরুর্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে । ব্যবাসায়ী সামী সান্নাউল্লাহ বলেন, ছোট ব্যবসা যারা করেন, তারা বলেন কনজারভেটিভ পার্টি বা লেবার পার্টি ছোট ব্যবসাকে মু্ল্যায়ন করে না । তবে আরেক ব্যবসায়ী এবিএম কামরুল হুদা আজাদ বলেন, লেবার পার্টি আসলে হয়তো অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত হতে পারে । তারা যতবার ক্ষমতায় ছিল ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছিল ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা: জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার এফআরএসএ বলেন, বিভিন্ন দেশে চরম ডানপন্থিদের উত্থান হলেও আপতত লেবার পার্টি মাধ্যমে সেটা হয়তো যুক্তরাজ্যে সেটা টেকানো সম্ভব হবে। এক জরিপে দেখা গেছে, ডানপন্থি রিফর্ম পার্টি এবার সাতটি আসন পেতে । এছাড়া খুব একটা স্বস্তিতে নেই কনজারভেটিভ পার্টি। তবে হাল ছাড়ছেন না ঋষি সুনাক। বিভিন্ন জনমত জরিপে পিছিয়ে রয়েছে তার দল। ইস্টহাম কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মুফতি নাফিস বলেন, এসব জরিপকে পাত্তা দিচ্ছেন না তারা।
বুধবার এক জরিপে লেবার পার্টির বিশাল জয়ের সম্ভাবনার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বৃটেনের পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৬৫০। এরমধ্যে ৪৮৪টি আসনে কেইর স্টারমারের লেবার পার্টি জয়ী হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভোটের ফলাফল জরিপকারী ওই সংস্থাটি।
এর আগে, দলটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ার ১৯৯৭ সালে ৪১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিলেন। এই জরিপে সেবারের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তা-ই যদি হয় তাহলে বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবার লেবার সবচাইতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে। যদিও গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের শাসন ক্ষমতায় টিকে রয়েছে বৃটেনের বৃহৎ রাজনৈতিক দলকনজার্ভেটিভপার্টি। ১৮৩৪ সালের পর থেকে সম্ভবত এবারই পরাজয়ের স্বাদ পেতে পারে কনজার্ভেটিভরা।
সর্বশেষ বিভিন্ন জরিপে বলা হচ্ছে, লেবার পার্টি প্রায় ৪০০টির মতো আসন পাবে। মেগাপোল অনুযায়ী, কনজারভেটিভরা যদি ৫০ থেকে ১৫০টি আসন পায় তাহলে তা হবে দলটির প্রতিষ্ঠালগ্নের পর থেকে সব চাইতে খারাপ ফলাফল-কনজারভেটিভের ঐতিহাসিক পরাজয়!
মন্তব্য করুন