দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের দেশ ইকুয়েডরের গোলযোগপূর্ণ বন্দর নগরী গুয়াকুইলে দুটি মাদক পাচারকারী চক্রের দুই বিরোধী পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কিছু মাদক কারবারি সদস্য রয়েছেন।
শুক্রবার (৭ মার্চ) ইকুয়েডরের স্থানীয় পুলিশ প্রধান হার্বি গুয়ামানি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর এএফপি।
গুয়াকুইল শহরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) লস টাইগারোনেস নামক একটি শক্তিশালী মাদক পাচারকারী দলের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এই ঘটনায় পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষও হামলা চালায়।
গুয়াকুইল, কলম্বিয়া ও পেরুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং ইকুয়েডর, যা বিশ্বের শীর্ষ কোকেন উৎপাদনকারী দেশগুলির একটি, সেখানে ২০টিরও বেশি অপরাধী দল মাদক পাচার, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির সাথে জড়িত।
ইকুয়েডরের ১ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে মাদক কারবারি গ্যাংয়ের সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। ২০১৮ সালে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে ছয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, কিন্তু ২০২৩ সালে এই সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে ৪৭-এ পৌঁছে। এই সহিংসতার মধ্যে দেশের গুয়ায়াস প্রদেশের রাজধানী গুয়াকুইল একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
গুয়াকুইল, যা এখন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে কোকেন পাচারের অন্যতম প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কারণে আন্তর্জাতিক মাদক কার্টেলগুলোর বিস্তার ঘটেছে এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ সহিংসতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইকুয়েডরের সরকার এই গ্যাংদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক ব্যবসায়ী গ্যাংগুলো দেশটিতে ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। গুয়াকুইলসহ ইকুয়েডরের সাতটি প্রদেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াই চলছে এবং দুই মাস ধরে সেখানে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।
এছাড়াও, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া গত মাসে ঘোষণা করেছেন যে, সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি মিত্র দেশগুলোকে বিশেষ বাহিনী পাঠানোর আহ্বান জানাবেন। এদিকে, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল ইকুয়েডরে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রেসিডেন্ট নোবোয়া ও বামপন্থি প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেসের মধ্যে মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এ পরিস্থিতিতে ইকুয়েডরের নাগরিকরা আরও বড় ধরনের সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন। আগামীতে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
মন্তব্য করুন