ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে স্বৈরশাসক বলে আখ্যায়িত করে দেশটিতে শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন বিরোধী দলের নবীনতম নেতা মারিয়া করিনা মাচাদো।
স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে হাজারো সাধারণ মানুষ মারিয়ার নির্বাচনী প্রচারে জড়ো হচ্ছেন। জ্বালাময়ী বক্তব্যের জন্য সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা মারিয়াকে ভেনেজুয়েলার ‘আয়রন লেডি’ বলতে শুরু করেছেন। সাম্প্রতিক একটি প্রচার সভায় একজন সমর্থক চিৎকার করে বলেন, ‘মারিয়া, আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সাহায্য করুন।’
২০১৩ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মাদুরো তার সরকারকে নামমাত্র বৈধতা দিতে সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে কারচুপি, জনপ্রিয় প্রতিযোগীদের নিষিদ্ধ কিংবা সরাসরি ফলাফলে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও স্বৈরশাসক মাদুরো তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক দমনপীড়ন, ভিন্নমতাবলম্বীদের গ্রেপ্তার করছেন। আর এত সব অসঙ্গতি দেশটির বিপুল সংখ্যক তরুণ সমাজকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে।
জাতীয় পরিষদের সাবেক রক্ষণশীল সদস্য মারিয়া ভেনেজুয়েলার সব বিরোধী দলকে সংগঠিত করেননি, বরং স্বৈরতান্ত্রিক সরকার পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে উজ্জীবিত করে তুলেছেন। তিনি অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং অভিবাসনে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোকে পুনরায় একত্রিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভেনেজুয়েলায় মাদুরোর দীর্ঘমেয়াদি শাসনের মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক সংকোচন দেখা গেছে। গত কয়েক বছরে সামান্য উন্নতি সত্ত্বেও এখনো লাখ লাখ মানুষের পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। ভেনজুয়েলার জরিপ বলছে, নির্বাচনে যদি দেখা যায় মাদুরো ফের ক্ষমতায় থাকছেন, তবে বিপুল সংখ্যক ভেনেজুয়েলান দেশ ত্যাগ করবেন।
এদিকে মারিয়া প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাদুরোর প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও প্রধান বিরোধী দলের প্রতি গণজোয়ার সৃষ্টির পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। ৫৬ বছর বয়সী মারিয়া কয়েক মাসের মধ্য হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছেন। আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মারিয়া মাচাদোর জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হবে। আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে উৎখাতে তিনি লাখ লাখ মানুষকে ব্যালট বাক্সে আনতে সক্ষম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নির্বাচন ২৫ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটাতে পারে।
বিরোধীরা জয়ী হলে ৭৪ বছর বয়সী স্বল্প পরিচিত কূটনীতিক এডমুন্ডো গঞ্জালেজ প্রেসিডেন্ট হবেন। তবে ওয়াশিংটন থেকে কারাকাস পর্যন্ত সবাই বোঝেন, লোহমানবী মারিয়া এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।
মন্তব্য করুন