কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫৩ পিএম
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরলেন নওয়াজ শরিফ

শনিবার চার বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন নওয়াজ শরিফ। ছবি : সংগৃহীত
শনিবার চার বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন নওয়াজ শরিফ। ছবি : সংগৃহীত

চার বছরের স্বেচ্ছানির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এনের সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফ। শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে দুবাই থেকে একটি চার্টার্ড বিমানে করে ইসলামাবাদে আসেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে দ্য ডন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জানুয়ারিতে পাকিস্তানের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন উপলক্ষে নিজ দল পিএমএল-এনের নেতৃত্ব দিতে দেশে ফিরেছেন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

নওয়াজ শরিফকে স্বাগত জানাতে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সিনেটর আজম তারার, পিএমএল-এনের সুপ্রিমোর আইনি দল ও দলের অন্য নেতারা বিমানবন্দরে উপস্থিত রয়েছেন।

পাকিস্তানের উদ্দেশে বিমানে চড়ার আগে দুবাই বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নওয়াজ বলেছেন, আজ আমি চার বছর পর পাকিস্তানে ফিরছি। পাকিস্তান ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার সময় আমার কোনো আনন্দ ছিল না। তবে আজ দেশে ফিরতে পেরে আমি বেশ আনন্দিত।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের তুলনায় দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে খুব ভালো হতো। দেশের পরিস্থিতি দেখে আমি খুব চিন্তিত ও হতাশ হয়ে পড়েছি। যে দেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সে দেশ এখন অর্থনৈতিক ও জাতীয় ঐক্যের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে।

পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে নওয়াজ বলেছেন, এখনো আশা আছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। কেননা এসব সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা আমাদের আছে।

দেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে নওয়াজ বলেছেন, দেশের নির্বাচন কবে হবে, তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন নিয়ে কিছু বলার ক্ষমতা শুধু এই প্রতিষ্ঠানের আছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে তারিখই ঘোষণা করুক, তা আমরা সবাই মেনে চলব। কমিশন যা বলবে সেটাই আমার অগ্রাধিকার। বর্তমানে পাকিস্তানে নিরপক্ষ নির্বাচন কমিশন রয়েছে। আমি মনে করি এটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেরা সিদ্ধান্ত নেবে।

নওয়াজ বলেছেন, এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগে। কিছু কাজ বাকি আছে। জনশুমারি হলো। সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। এসব বিষয়ে ইসির নজর রয়েছে।

দেশে ফিরলেও পিএমএল-এনের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত লাহোরে প্রথমে পা রাখেননি নওয়াজ। এ বিষয়ে পাকিস্তানি রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, জামিন ইস্যুর কারণে প্রথমে লাহোরে না গিয়ে ইসলামাবাদে নেমেছেন নাওয়াজ। গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তার আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন। আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তার এই জামিনের মেয়াদ রয়েছে। ফলে এ সময়ের মধ্যে তার আর গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় নেই।

পিএমএল-এনের দলীয় সূত্রের বরাতে দ্য ডন জানায়, বিমান থেকে নেমে ইসলামাবাদে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে লাহোরের উদ্দেশে রওনা দেবেন নওয়াজ। এরপর জাতীয় ওমরার বাসভবন হয়ে মিনার-ই-পাকিস্তানের যাত্রা করবেন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা ইসহাক দার বলেছেন, লাহোরের মিনার-ই-পাকিস্তানের সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য শনিবার বিকাল ৫টায় সেখানে যাবেন নওয়াজ।

পাঞ্জাবের এক পিএমএল-এন নেতা দ্য ডনকে বলেছেন, লাহোরে পিএমএল-এন এখনো জনপ্রিয় দল, এই বার্তা দিতে নওয়াজ শরিফের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে দলের নেতারা সফল হবেন। কেননা এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, কয়েক মাস পর দেশের সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দলকে বহুল প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেবে। তিনি দলীয় নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন।

নওয়াজ শরিফকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে ব্যাপক আয়োজন করেছে পিএমএল-এন। শনিবারের লাহোরের মিনার-ই-পাকিস্তানের সমাবেশ সফল করতে গত শুক্রবার বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন শাহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ শরিফ ও হামজা শাহবাজসহ পিএমএল-এন নেতারা। এই সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগমের আশা করছে দলটি।

দুর্নীতির দায়ে ২০১৮ সালে নওয়াজ শরিফকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সর্বশেষ পাকিস্তানে কারাগারে তিনি সাজা ভোগ করছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০১৯ সালে আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।

নওয়াজ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩, ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ এবং ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিন দফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে কোনোবারই তিনি মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানা সময়ে দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন নওয়াজ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই বিরোধের জেরেই বারবার তাকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, এমন গুঞ্জন রয়েছে।

নির্বাসনেরে চার বছর নওয়াজ যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কাটিয়েছেন। সেখানে শুরুতে মাঝে-মধ্যে সেনাবাহিনী ও ইমরান খান সরকারের সমালোচনা ছাড়া তেমন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না তিনি। তবে ২০২২ সালে সংসদে অনাস্থা ভোটে পিটিআইপ্রধান ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হলে পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন নওয়াজ। ২০১৮ সালে নওয়াজের স্থলাভিষিক্ত হয়েই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বর্তমানে কারাবন্দি ইমরান খান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জোড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ড জয় ভারতের

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রোগ্রামার শাহেদা মুস্তাফিজকে নিয়ে রাহিতুলের বই

বাপার সংবাদ সম্মেলন / ‘পরিবেশ রক্ষায় প্রতিবন্ধক আমলারা, বন্ধু হচ্ছে জনগণ’

সর্বক্ষেত্রে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করুন : সাবেক এমপি হাবিব

জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ : ফরহাদ মজহার

ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান

ঢাকায় নাটোরবাসীর মিলনমেলা শুক্রবার

সোনারগাঁয়ে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের সুপারিশ সংবিধান সংস্কার কমিশনের

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন মোখলেছুর রহমান

১০

শেখ পরিবার সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ : দুদু 

১১

শীতে বাড়ছে ডায়রিয়া, ৮৫ শতাংশ রোগীই শিশু

১২

এসএমসি’র ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে লোগো উন্মোচন 

১৩

৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের ভোটগ্রহণের প্রস্তাব

১৪

‘একদম চুপ, কান ফাটাইয়া ফেলমু’, অধ্যক্ষকে জামায়াত কর্মী

১৫

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন

১৬

বগুড়ায় নাশকতা মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৭

বিয়েতে অস্বীকৃতি, বাবার গুলিতে মেয়ে নিহত

১৮

সাত কৃষককে ধরে নিয়ে গেল সন্ত্রাসীরা, মুক্তিপণ দাবি

১৯

ছাগলকাণ্ড : সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রিমান্ডে

২০
X