ভারতশাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ভারতের প্রত্যাশামতো কঠোর ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। এই বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর যেভাবে জাতিসংঘ শক্তভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল, এবার পেহেলগামের হামলার ঘটনায় তেমন অবস্থান নেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ। এছাড়াও ২৬ পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় জাতিসংঘের প্রকাশিত বিবৃতিতে ‘ভারত’ শব্দটির কোনো উল্লেখই ছিল না। বরং বলা হয়েছে, তদন্তে ‘সব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের’ সহযোগিতা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের বিবৃতিটির খসড়া প্রস্তাব করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তবে তা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়নি। এতে বোঝা যায়, পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সফল হয়েছে এবং বিবৃতির ভাষা ভারসাম্যপূর্ণ রাখা সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানের কূটনীতিকরা এমন সব শব্দ ও বাক্য প্রয়োগ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলো তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে বিবেচিত হতো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, বিবৃতিতে ‘জম্মু ও কাশ্মীর’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হলেও, ‘পেহেলগাম’ নামটি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এই অঞ্চলকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা ছিল, যাতে অঞ্চলটির বিতর্কিত মর্যাদাকে অস্বীকার করা যায়। তবে পাকিস্তানের প্রতিবাদের ফলে বিবৃতিতে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে আবারও কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে তুলে ধরা হয়।
এদিকে এই বিবৃতির পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়েছে। ভারত একতরফাভাবে ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে, আর পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তার আকাশপথ ভারতীয় বিমানের জন্য বন্ধ করে দেয়। উভয় দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগও দৃশ্যত কমে এসেছে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানান এবং তিনি বলেন, পাকিস্তান এতে অংশ নিতে প্রস্তুত।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, সংস্থাটি কাশ্মীর অঞ্চলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভারত ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে, যেন এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে পরিণত না হয়।
এই ঘটনার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা পুরো অঞ্চলেই অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
মন্তব্য করুন