কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসাজশ রয়েছে- ভারতের অধিকাংশ মানুষ এমনটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স নামের গোষ্ঠীটি হামলার দায় স্বীকার করার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও এ ধরনের প্রচার চলছে। এতে ভারতজুড়ে ক্ষোভ চরমে। আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেকেই সরকারের প্রতি পাকিস্তানে হামলার আহ্বান জানাচ্ছেন।
আল জাজিরার সংবাদদাতা নেহা পুনিয়া নয়াদিল্লি থেকে এ ধরনের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন। তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে চলমান উত্তেজনা নিয়ে ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেন। তাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, ভারত বড় ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
নেহা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ চাপ তীব্র হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই সন্ত্রাসী হামলার সাথে সীমান্তের আন্তঃসংযোগ রয়েছে। এরপরই ভারতীয়দের আবেগ তীব্র হচ্ছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর ভারতীয় হতবাক এবং ক্ষোভে ফুঁসছে। বিরোধী দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলেই এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কিছু করার আহ্বান জানাচ্ছে।
এই তালিকায় আছেন বিজেপি নেতারাও। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার গেটে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছেন বিজেপি বিধায়করা। যার নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুংকার দেন।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব ভালো করেই জানে, আন্তঃসীমান্ত নিয়ে তাদের বক্তব্য ক্ষোভ উসকে দেবে। ক্ষোভ বাড়লে পাকিস্তানে হামলা করতে মোদির ওপরও চাপ বাড়বে, এটিই স্বাভাবিক। যদিও পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মোদি ইচ্ছেকৃতভাবেই এসব করছেন। তার সরকার নিজেদের পরিকল্পনাতেই কাজ করছে।
এমনকি কাশ্মীর হামলাকে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ হিসেবে সন্দেহ করছেন পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) রশিদ ওয়ালি ভারতীয় মিডিয়ার উপর কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, হামলার পরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘বেসামরিক ও অসত্য অভিযোগ’ ছড়ানো শুরু হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারত যদি আবারও কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে এর ফলাফল হতে পারে বিপর্যয়কর, যেমনটা হয়েছিল ‘বালাকোট হামলার’ পর।
অপরদিকে নেহা যেসব ভারতীয় বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেছেন তাদের অনেক বলেছেন, ভারত ২০১৯ সালের হামলার পর পরিচালিত বিমান হামলার মতো সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করতে পারে। সে সময় কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক গোষ্ঠীর হামলায় ৪০ জন সৈন্য নিহত হয়েছিল।
কিন্তু অনেক বিশ্লেষক সংযমের আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা নেহাকে বলেছেন, আরেকটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের সময় এখন নয়। বিশেষ করে এই দুটি দেশের মধ্যে ইতিহাস বিবেচনা করলে এখানে শান্তি বজায় রাখা আবশ্যক। ভারত-পাকিস্তান তিনটি বড় যুদ্ধ করেছে। ইতিমধ্যেই তাদের মধ্যে খুব তিক্ত সম্পর্ক রয়েছে। ফের যুদ্ধ বাধলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
মন্তব্য করুন