মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কনীতিতে ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তানের রপ্তানি খাত। এর ফলে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এ বাজার দখলের বিরাট সুযোগ আসতে চলেছে। শুল্কনীতি কার্যকর হলে পাকিস্তানের ১৪০ কোটি ডলারের রপ্তানি খাত হুমকির মুখে পড়বে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে টেক্সটাইল শিল্প।
সোমবার ( ১৪ এপ্রিল) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক বৃদ্ধি পাকিস্তানের রপ্তানি খাতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছে সরকারি মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস (পিআইডিই)। যদিও আপাতত এ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
পিআইডিই জানিয়েছে, পাকিস্তানের বাণিজ্য আকাশে ঝড় জমে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পাল্টা শুল্ক পাকিস্তানের রপ্তানি খাতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ২৯ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যদি আরোপ করা হয়, তবে বিদ্যমান ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (এমএফএন) শুল্কসহ মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এর ফলে পাকিস্তানের মার্কিন রপ্তানি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। যার ফলে বছরে ১১০ থেকে ১৪০ কোটি ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
২০২৪ অর্থবছরে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার বেশিরভাগই ছিল টেক্সটাইল ও পোশাকপণ্য। এই খাতই প্রস্তাবিত শুল্কের সবচেয়ে বড় শিকার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিযোগিতার দিক থেকে পাকিস্তানের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ভারত ও বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক প্রতিযোগীরা মার্কিন বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে।
এছাড়া, বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যেমন নিশাত মিলস ও ইন্টারলুপ উৎপাদন হ্রাস করতে বাধ্য হতে পারে, যার ফলে ৫ লাখেরও বেশি চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়বে। চামড়া, চাল, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি ও ক্রীড়াসামগ্রীর মতো নন-টেক্সটাইল রপ্তানিও হুমকির মুখে পড়বে।
পিআইডিই এই সংকটকে এক ধরনের কৌশলগত পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবেও দেখছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানকে এখনই কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে পারস্পরিক ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরতে হবে এবং দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে ১৮১ মিলিয়ন ডলারের তুলা রপ্তানি করেছে, যা এখন হুমকির মুখে। পাকিস্তান চাইলে কিছু মার্কিন পণ্যের শুল্ক হ্রাস করে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে যেমন- যন্ত্রপাতি, স্ক্র্যাপ ধাতু ও পেট্রোলিয়াম।
দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পিআইডিই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, আসিয়ান দেশ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো উদীয়মান বাজারে তথ্যপ্রযুক্তি, হালাল খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ক্রীড়াসামগ্রীর রপ্তানিতে সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শক্তি ও লজিস্টিক খরচ কমানো, নিয়ম সহজীকরণ এবং উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি গ্রহণকে উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পিআইডিই আরও জানায়, প্রস্তাবিত মার্কিন শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা ৩.৪ শতাংশ অতিক্রম করে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের লঙ্ঘন হতে পারে। যদিও ডব্লিউটিওর মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, কিন্তু সীমিত আর্থিক সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন তুলা পাকিস্তানে আসে এবং পাকিস্তান সেখান থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। ফলে এই আন্তঃসম্পর্কিত চেইনকে ধ্বংস করা কারও জন্যই লাভজনক নয়। প্রতিষ্ঠানটির মতে, পথটা কঠিন, কিন্তু এই সংকট পাকিস্তানের জন্য রপ্তানি কাঠামো পুনর্গঠনের একটি সুযোগও বটে।
মন্তব্য করুন