ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে দুর্বৃত্তদের গুলিতে পাকিস্তানের আট মোটর মেকানিক নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোররাতে ইরান-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী মেহারিস্তান জেলার একটি গ্যারেজে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। খবর আরব নিউজ।
ইরানি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, নিহত শ্রমিকরা সবাই পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুর জেলার বাসিন্দা। তারা স্থানীয় একটি গ্যারেজে গাড়ি রং করা, পালিশ ও মেরামতের কাজে নিযুক্ত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে অজ্ঞাত হামলাকারীরা গ্যারেজে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে শ্রমিকদের হাত বেঁধে ফেলে এবং পরে কাছ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। আট শ্রমিকই ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে মনে করা হচ্ছে, এটি পূর্ব পরিকল্পিত একটি সন্ত্রাসী হামলা।
ঘটনার পরপরই ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় অভিযান শুরু করে এবং গ্যারেজ ও আশপাশের অঞ্চল ঘিরে ফেলে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হামলার পর এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এর দায় স্বীকার করেনি। ইরানি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ইরান সরকার জানিয়েছে, হামলার পেছনে কারা রয়েছে, তা উদঘাটনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ঘটনার পরপরই তেহরানে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তারা নিহতদের শনাক্তকরণ, মরদেহের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছেন। দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা ইরানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছি। নিহতদের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়, সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরান সরকারকে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক দেশগুলোকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, নিহতদের মরদেহ দ্রুত পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিহতদের পরিবারকে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইরানের একই প্রদেশের সারাভান শহরে একই ধরনের হামলায় ৯ পাকিস্তানি শ্রমিক নিহত হন। তাদেরও পেশা ছিল গাড়ি মেরামতের। এ ধরনের ধারাবাহিক হামলায় সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মন্তব্য করুন