কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নতুন মাত্রায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক, সজাগ দৃষ্টিতে ভারত

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো এককালের শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা। গত কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যা আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছে ভারত।

সোমবার (১৭ মার্চ) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর গত মাসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। এছাড়া সরাসরি ফ্লাইট চালু, সামরিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, ভিসা প্রক্রিয়া সহজকরণ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার খবরও প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত ছিল। বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছিল, যেখানে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল। তবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের সময় দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উন্নতি হয়েছিল।

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে (২০০৯-২০২৩) বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল এবং ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু গত বছর ব্যাপক বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান এবং তার সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন গতি দেখা যাচ্ছে।

সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক কিছুটা জটিল ছিল। কিন্তু এখন এটি দুই প্রতিবেশীর স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে ফিরে যাচ্ছে।

এই উন্নয়ন ভারতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও শীতলতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করেছে, কিন্তু ভারত এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। লন্ডনের কিংস কলেজের সিনিয়র ফেলো ও পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্কটি কৌশলগত। তারা একসঙ্গে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইছে।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছাড়াও সামরিক ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করে এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করে। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশি নৌবাহিনী করাচি উপকূলে পাকিস্তানের আয়োজিত একটি বহু দেশীয় নৌমহড়ায় অংশ নেয়।

২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন ভীনা সিকরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য ‘ডেজা ভু’ মুহূর্তের মতো। তার মতে, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ভারতের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চিন্তার বিষয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বলছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ইস্যুগুলো সমাধান না হলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। যুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাঙালি নিহত হয় এবং হাজার হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ৯০ হাজারের বেশি পাকিস্তানি নিরাপত্তা ও বেসামরিক কর্মী ভারত ও বাংলাদেশি বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়, যা ইসলামাবাদে একটি অপমানজনক অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়। যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে কিন্তু ইসলামাবাদ তা করতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য পাকিস্তানের দায় স্বীকার করা উচিত। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ১৯৭১-পূর্ববর্তী সম্পদের বণ্টনের বিষয়টিও উত্থাপন করেছি।

এমনকি ইকরাম সেহগালের মতো প্রাক্তন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রধান বাধা হলো বাংলাদেশিদের দাবি যে, ১৯৭১ সালে যা ঘটেছিল তার জন্য পাকিস্তানিদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই দেশ প্রথমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম, যা বেশিরভাগই পাকিস্তানের পক্ষে। ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সাবরিন বেগ বলেছেন, পাকিস্তানের ২৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি একটি বড় বাজার।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের এপ্রিলে ঢাকা সফরের সময় কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, যা নতুন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীকে শাস্তি

নরসিংদীতে তিন সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগ

জুলাই-আগস্টে ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলা, ১২৮ জন সাময়িক বহিষ্কার 

যুবদলের জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সড়ক কেটে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ

নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ভুল চিকিৎসায় তরুণের মৃত্যু, ৪ লাখ টাকায় দফারফা

মাদ্রাসাছাত্রকে চাপা দিয়ে পালানোর সময় ট্রাকচালক গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের সাক্ষাৎকার

সাবেক এমপি মঞ্জুসহ বিএনপির ৬৩ নেতাকর্মী খালাস

ফিরছেন মহাকাশে আটকে পড়া দুই নভোচারী

১০

বাংলালিংকের নতুন সিইও হচ্ছেন ইওহান বুসে

১১

নিয়োগে সুপারিশ, নাহিদ ও নুসরাতকে নিয়ে মুখ খুললেন মাসুদ

১২

সেই মন্টু দাসের পরিবারের দায়িত্ব নিল জামায়াত 

১৩

জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

১৪

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি ফেরত চাইলেন ফরাসি এমপি

১৫

রাজশাহীতে মাদকবিরোধী অভিযানে ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্যসহ আহত ২

১৬

‘ঘুষের রেট নির্ধারণ’ নিয়ে সভা / শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে শোকজ

১৭

আইনজীবী আলিফ হত্যা, দুই আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

১৮

লোহিত সাগরে মার্কিন রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

১৯

ছোট বড় বিষয় নয়, ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই সংস্কার : স্বপন 

২০
X