ভারত-অধিকৃত কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ইতোমধ্যেই তিনটি যুদ্ধ করেছে এবং প্রয়োজনে আরও ১০টি যুদ্ধ করবে। পাকিস্তান ভারতের সামরিক শক্তি বা প্রযুক্তিকে ভয় পায় না, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জেনারেল আসিম মুনির আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদের প্রবীণ ও নাগরিকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
সেখানে তিনি বলেন, কাশ্মীর পাকিস্তানের জন্য জীবন-মরণের বিষয় এবং এটি পাকিস্তানের শিরার মতো। কাশ্মীর কেটে গেলে মৃত্যু ঘটে তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাশ্মীর আমাদের জীবন। কোনো সন্দেহ নেই, একদিন কাশ্মীর স্বাধীন হবে এবং পাকিস্তানের অংশ হবে। পাকিস্তানই কাশ্মীরের জনগণের ভাগ্য।
কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে পাকিস্তানের অবিচল সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ভারতীয় নৃশংসতা এবং ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থা কেবল কাশ্মীরি জনগণের সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে।
এছাড়া, তিনি পাকিস্তানের সামরিক শক্তির সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বিশ্বে পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিচিত এবং পাকিস্তান উন্নতির পথে রয়েছে। পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তান কখনো খেলাপি হতে পারে না। বিশেষ করে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ এবং ৪৮ বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে।
পাকিস্তানিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের উচিত আজাদ কাশ্মীরে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ আনা, যেখানে স্থানীয়রা জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। তিনি জানান, সরকার স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং শিগগিরই দ্রুততম ইন্টারনেট পরিসেবা পাওয়া যাবে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্ব চলছে, যা ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর থেকেই শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা করে।
এরপর ১৯৪৮ সালে যুদ্ধবিরতি হয়, কিন্তু পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে অস্বীকার করে। কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে এবং পরবর্তী বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত এবং চীনের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।
ভারতের ২০১৯ সালের ৫ আগস্টে সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।
পাকিস্তান এবং ভারত দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় কাশ্মীর ইস্যু এখন একটি গম্ভীর আন্তর্জাতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে ভবিষ্যতে আরও সংঘাতের আশঙ্কা বিদ্যমান, যেহেতু দুই দেশের সম্পর্ক শীতল এবং দ্বন্দ্বপ্রবণ।
মন্তব্য করুন