পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে একটি অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ সেনা নিহত হয়েছেন। এ হামলায় আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও স্থানীয় কর্মকর্তারা।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মানগোচার শহরের কাছে একটি সড়ক বন্ধ করে, সন্ত্রাসীরা একটি নিরস্ত্র ফ্রন্টিয়ার কর্পসের সেনাদের বহনকারী গাড়িতে হামলা চালায়। তিনি জানান, হামলায় গাড়িতে থাকা ১৭ জন সেনা নিহত হন এবং তাদের রক্ষা করতে যাওয়া আরেক সেনাও প্রাণ হারান। হামলায় আহত তিন সেনার অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে। তবে দুজন সেনা হামলার জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন।
এই হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি, তবে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সেনা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আইএসপিআর আরও জানায় যে, বেলুচিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি অভিযান চালিয়ে ২৩ সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।
বেলুচিস্তান একটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল প্রদেশ, যা আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। এই প্রদেশের স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার দাবির আওয়াজ উঠছে। বেলুচিস্তান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হলেও, এখানকার মানুষ পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র। এজন্য এই প্রদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠী বিএলএ (বেলুচ লিবারেশন আর্মি) প্রায়ই হামলা চালিয়ে থাকে। তারা অভিযোগ করে যে, চীনসহ অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণ অত্যন্ত দরিদ্র।
বেলুচিস্তানে এই ধরনের হামলার ঘটনা নতুন নয়। গত নভেম্বরে কোয়েটার রেলস্টেশনে বিএলএ একটি হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করেছিল, যার মধ্যে ১৪ জন সেনাও ছিলেন। এছাড়া, খাইবার পাখতুনখাওয়াতে এবং অন্যান্য অঞ্চলেও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ৩৮৩ সেনা এবং ৯২৫ সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
এই হামলা এবং সংঘাত বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে, এবং এই অঞ্চলের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি পাকিস্তানের আহ্বান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন